Tuesday, 11 February 2014

আহলুস্ সুন্নাহ’র দৃষ্টিতে মীলাদুন্নবী (দ:)

প্রশ্ন: মীলাদ/মওলিদ কোনো সাহাবী (রা:) কর্তৃক পালিত হয় নি, তাবেঈনদের দ্বারাও আয়োজিত হয় নি। এই সালাফ আস্ সালেহীন (প্রাথমিক যুগের পুণ্যাত্মাবৃন্দ)-দেরকেই আমরা অনুসরণ করি, যা সঠিক এবং নিরাপদ পথ ও মত।

জবাব: প্রথমতঃ এ দাবি অমূলক। কেননা রাসূলুল্লাহ (দ:) স্বয়ং নিজ মীলাদ-দিবস পালন করতেন যা সহীহ মুসলিম শরীফে প্রমাণিত হয়েছে এই মর্মে যে, তাঁকে সোমবার দিন তিনি রোযা রাখেন কেন এই বিষয়ে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল। আর তিনি উত্তর দেন, ‘এই দিন আমি ধরাধামে শুভাগমন করেন, এবং আমার প্রতি ওহী তথা ঐশী প্রত্যাদেশও অবতীর্ণ হয় এই দিন’ [দেখুন ওপরের ‘আহাদীস থেকে এস্তাদলাল’ শীর্ষক অংশের ১ম দলিল]। সর্বোপরি, আল্লাহতা’লা স্বয়ং ‘আম্বিয়া (আ:)-বৃন্দের মীলাদ তথা ধরণীতে শুভাগমনকে শান্তির দিন’ বলে কুরআনে ঘোষণা করেন [১৯:১৫]।

দ্বিতীয়তঃ আমরা ‘সালাফী’দেরকে আহ্বান জানাই মহানবী (দ:)-এর এমন একটি সুস্পষ্ট হাদীস দেখাতে যেখানে তিনি মীলাদকে বারণ করেছেন। মনে রাখবেন, কোনো বিষয়কে হারাম বলতে হলে নির্ভরযোগ্য প্রামাণিক দলিল প্রদর্শন করা বাধ্যতামূলক; পক্ষান্তরে এমন কি নীরবতাও আমাদের সুন্নীদের পক্ষে যাবে নিম্নোক্ত হাদীসবলে:

হযরত আবু দারদা (রা:) বর্ণনা করেন যে রাসূলে খোদা (দ:) বলেন: ”আল্লাহতা’লা তাঁর কেতাবে (কুরআনে) যা কিছুর অনুমতি দিয়েছেন তা হালাল, যা কিছু নিষেধ করেছেন তা হারাম; আর যে ব্যাপারে নীরবতা পালন করেছেন, তা ক্ষমাপ্রাপ্ত । অতএব, আল্লাহর ক্ষমা গ্রহণ করো, কেননা আল্লাহ বিস্মৃত হন না।” অতঃপর মহানবী (দ:) নিচের আয়াতে করীমা তেলাওয়াত করেন, ’আর আপনার প্রভু খোদাতা’লা কখনো বিস্মৃত হন না’ (সূরা মরিয়ম, ১৯:৬৪)। [ইমাম হায়তামী কৃত ’মজমাউয্ যাওয়াইদ’, ১:১৭১, হাদীস নং ৭৯৪]

ইমাম হায়তামী (রহ:) বলেন, এ হাদীসের বর্ণনাকারী হলেন আল-বাযযার এবং তাবারানী তাঁর ‘কবীর’ গ্রন্থে, ’যার নির্ভরযোগ্য বর্ণনাকারীদের এসনাদ (সনদ) হাসান পর্যায়ভুক্ত।’

এই হাদীসকে সহীহ বলেছে নাসিরুদ্দীন আলবানীও, তার রচিত ‘সিলসিলাত আস্ সহীহাহ্’ পুস্তকে (৫:৩২৫)।

অতএব, এই হাদীস মোতাবেক নীরবতা প্রমাণ করে যে মওলিদ/মীলাদ জায়েয (অনুমতিপ্রাপ্ত)। কেননা, এর আসল (মূলভিত্তি) কুরআন ও সুন্নাহতে বিদ্যমান, যার অসংখ্য প্রমাণ আমরা ওপরে পেশ করেছি।

তৃতীয়তঃ যদি ধরেও নেয়া হয় যে সাহাবা-এ-কেরাম (রা:) বা তাবেঈনবৃন্দ এটি করেন নি (যদিও এর কোনো নফি বা নেতিবাচক প্রমাণ বিদ্যমান নেই), তাহলে তো অনেক আমল-ই সাহাবা-এ-কেরাম (রা:) ও তাবেঈনবৃন্দ পালন করেন নি; বরং পরবর্তীকালের উলামা-এ-কেরাম সেগুলো মৌলনীতির সাথে সঙ্গতির ভিত্তিতে জায়েয হিসেবে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। সুতরাং কোনো বিষয় শরীয়তের সাথে অসামঞ্জস্যপূর্ণ না হলে সর্বদা জায়েয হিসেবে সাব্যস্ত হতো। উদাহরণস্বরূপ, হাদীসশাস্ত্রে আল-জারহ ওয়াত্ তা’দীল-এর জ্ঞান, আসমা-উর-রিজাল সংক্রান্ত জ্ঞান, আল-কুরআনে এ’রাব বসানো, মসজিদে মিনারা নির্মাণ, বর্ণনাকারীদের এসনাদ বা পরম্পরাসহ হাদীস বর্ণনা ইত্যাদি জায়েয। এর কারণ হলো, শরীয়তে এগুলোর মৌলভিত্তি পাওয়া যায়। অনুরূপভাবে, মীলাদুন্নবী (দ:)-এর উদযাপন আল-কুরআনেই বিদ্যমান, আর তা সুন্নাহতেও বিদ্যমান।

No comments:

Post a Comment