Saturday 14 June 2014

শব'বারাআত কী

“শব” শব্দটা ফার্সি। যার অর্থ হল-রাত। আর বরাআত এটি আরবী শব্দ। মূলত হল-براءت যার অর্থ হল “মুক্তি” তথা জাহান্নাম থেকে মুক্তির রাত হল শবে বারাআত। বরাত বলাটা ভুল। কারণ শবে বরাত (برات) মানে হল বিয়ের রাত। সুতরাং আমরা বলব-শবে বারাআত ( ( شب براءت
শবে বারাআতকে হাদিসের পরিভাষায় বলা হয়েছে “লাইলাতুন নিসফি মিন শাবান”(ليلة النصف من شعبان) তথা শাবানের অর্ধ মাসের রাত। কেউ কেউ “শবে বরাআত” নামে হাদিসে শব্দ না থাকায় এ রাতকে অস্বিকার করার মত খোড়া যুক্তি দিয়ে থাকেন। তাদেরকে আমি বলি-আমরা পাঁচ ওয়াক্ত নামায পড়া আবশ্যক বলি কুরআন হাদিসে বর্ণিত নির্দেশের কারণে।
কিন্তু কুরআন হাদিসের কোথাও কি নামায শব্দ আছে? তাওহীদ কে আমরা ঈমানের শর্ত বলি। কিন্তু কুরআন হাদীসের কোথাও তাওহীদ শব্দ নেই। তাই বলে কি তাওহীদ কুরআন হাদীস দিয়ে প্রমাণিত নয়? আমরা যাকে নামায বলি সেই অর্থবোধক কুরআন হাদিসের উদ্ধৃত শব্দ “সালাত”ই হল নামায। আমরা যাকে তাওহীদ বলি কুরআন হাদীসের একত্ববাদ প্রকাশক সকল শব্দই হল এ তওহীদ।
তেমনি আমরা যাকে “শবে বারাআত” বলি।
তথা শাবানের পনের তারিখের রাত বলে থাকি।
এই অর্থবোধক শব্দ হাদিসে পাওয়া গেলে তা’ই হবে শবে বারাআত।
আর এই অর্থবোধক হাদীসে বর্ণিত শব্দ হল “লাইলাতুন নিসফি মিন শাবান”।
সুতরাং তাই হল শবে বারাআত।

Thursday 12 June 2014

শাবানের মধ্যরাত্রি অর্থাৎ শবে বরাত সম্পর্কিত হাদিসে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম...

১) হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, একবার হুযুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম কে রাতে আমার সাথে বিছানায় না পেয়ে বাইরে তালাশ করতে বের হয়ে ওনাকে জান্নাতুল বাক্বীতে পেলাম। তিনি বললেনঃ তুমি কি মনে করেছো আল্লাহ ও তাঁর রসূল তোমার সাথে আমানতের খিয়ানত করেছেন? আমি বললামঃ ইয়া রসূলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমি ধারনা করেছিলাম যে, আপনি হয়তো আপনার অন্য কোন আহলিয়ার হুজরা শরীফে তাশরীফ নিয়েছেন। অতঃপর হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক শা'বানের ১৫ তারিখ রাতে পৃথিবীর আকাশে অবতরণ করেন। অতঃপর তিনি বণী কালবের মেষের গায়ে যত পশম রয়েছে তার চেয়ে বেশী সংখ্যক বান্দাকে ক্ষমা করে থাকেন।
১। তিরমিযী শরীফঃ ৭৩৯, ২। নাসায়ীঃ জানাজা অধ্যায়; ২০৩৭, ৩। ইবনে মাজাহঃ ১৩৮৯, ৪। মুসনাদে আহমদঃ ২৫৪৮৭, ৫। সুনানে বাইহাকীঃ ১/১২৭, ৬। মুস্তাদরাকে হাকেমঃ ১/২৮৮, ৭। শুয়াবুল ঈমানঃ ৩৮২৬।

২) হযরত আবু মুসা আশয়ারী রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ননা করেন, আল্লাহ পাকের হাবীব হুযুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক শা'বান মাসের ১৫ তারিখ রাত্রিতে ঘোষনা করেন যে, ওনার সমস্ত মাখলুকাতকে ক্ষমা করে দিবেন। শুধু মুশরিক ও হিংসা-বিদ্বেষকারী ব্যতীত।
১। ইবনে মাজাহঃ ১৩৯০, ২। নাসায়ীঃ জানাজা অধ্যায়।
৩) হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ননা করেন, হুযুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, যখন অর্ধ শা'বানের রাত অর্থাৎ শবে বরাত উপস্থিত হবে তখন তোমরা উক্ত রাতে সজাগ থেকে ইবাদত-বন্দেগী করবে এবং দিনের বেলায় রোযা রাখবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক উক্ত রাতে সূর্যাস্তের সময় পৃথিবীর আকাশে অবতরণ করেন (রহমতে খাছ বান্দাহর নিকটবর্তী করেন)। অতঃপর ঘোষাণা করতে থাকেন, কোন ক্ষমা প্রার্থনাকারী আছো কি? আমি ক্ষমা করে দিব। কোন রিযিক প্রার্থনাকারী আছো কি? আমি তাকে রিযিক দান করব। কোন মুছিবগ্রস্ত ব্যক্তি আছো কি? আমি তার মুছিবত দূর করে দিব। এভাবে সুবহে ছাদিক তথা ফজর পর্যন্ত ঘোষাণা করতে থাকেন।
ইবনে মাজাহঃ ১৩৮৮

Wednesday 12 March 2014

হযরত বায়েজীদ বোস্তামী (রহঃ) এর একটি কারামত

হযরত বায়েজীদ বোস্তামী (রহঃ) রাসুলে করীম সাল্লাল্লাহু আলায়হে ওয়াসাল্লাম এর যিয়ারতের উদ্দেশ্য মদিনা মুনাওয়ারা সফরের প্রস্তুতি গ্রহণ করলেন।অনেক ভক্ত-মুরীদও তাঁর সফর সঙ্গী হলেন।সফরের প্রয়োজনীয় জিনিস পত্রের বোঝা তিনি উটের পিটের ওপর রাখলেন।বোঝার আকার একটু বড় দেখে কিছু লোক বলে উঠলেন এতবড় বোঝা প্রাণীর উপর রাখা বুযুর্গুদের শানের খেলাপ।যেহেতু এর দ্বারা তাদের কষ্ট হয়।এটা শুনে তিনি বললেন,বোঝা আমি উটের পিটের উপর রাখছি কিনা ভাল করে দেখুন।সবাই মনোযোগ দিয়ে দেখল যে,ঠিকই বোঝা উটের পিটের উপর নয় বরং উটের পিট হতে সামান্য উপরে ঝুলন্ত অবস্থায়।সবাই আশ্চর্য হয়ে ভুল বুঝতে পেরে তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করলেন।তিনি ক্ষমা করে দিয়ে সবাইকে উদ্দেশ্য করে বললেন আমি এইসব কিছু গোপন রাখতে চাই।কিন্তু সমস্যা হল অনেক সময় কিছু মানুষ না বুঝে সমালোচনা শরু করে দেয়।ফলে তারা গুনাহের ভাগী হয়ে যায়।সে সময় আমাকে বাধ্য হয়ে তাদেরকে গুনাহ্ থেকে বাঁচানোর জন্য আসল রহস্য প্রকাশ করতে হয়।আবার প্রকাশ করতে গিয়ে আরেক সমস্যা দেখা দেয়।কারামতসমূহ দেখে মানুশ এমনভাবে হতবম্ব হয়ে যায় যে,তাদের হুঁশ আকল পর্যন্ত চলে যায়।
[Source:হযরত বায়েজীদ বোস্তামী (রহঃ) ও তাঁর দরগাহ শরীফ,পৃষ্ঠা-১৪৮

Monday 10 March 2014

রাসূলে পাক (দ) এর হাত মোবারকের সুগন্ধি

রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসল্লাম এর হাত মুবারক হতে সর্বদা খুশবো বের হতো.....
হযরত জাবের ইবনে সামুরা রাঃ বলেন,
 আমি রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসল্লাম এর সাথে ফজরের নামায আদায় করলাম,অতঃপর নিজের হুজরা মুবারকের দিকে যাচ্ছিলেন । যাওয়ার পথে যত বাচ্চা দেখলেন সকলের মুখের উপর হাত বুলিয়ে দিলেন, এক পর্যায়ে আমার মুখের উপরও । আমি এমন কোমলতা ও সুগন্ধি অনুভব করলাম মনে হচ্ছিল যেন আতরের বক্সের ভেতর থেকে তিনি এই মাত্র হাত মুবারক বের করে এনেছেন ।


(মুসলিম শরীফ ২য় খন্ড,২৫৬ পৃঃ, মিশকাতুল মাসাবীহ, ৫১৭পৃঃ )

--- সুবহানাল্লাহ ----

Sunday 9 March 2014

নবী করিম (সঃ) যে নুরের তৈরি তার দলিল

নবী করিম (সঃ) যে নুরের তৈরি তার দলিল

কোরআন শরীফের আলোকেঃ

আল্লাহ তায়া’লা ইরশাদ করেন-
قد جاءكم من الله نور و كتاب مبين-                                              
অর্থঃ নিশ্চয়ই তোমাদের নিকট আল্লাহর পক্ষ থেকে একটা নূর এবং স্পষ্ট কিতাব এসেছে।। (সূরা মায়িদা আয়াত- ১৫)
আলোচ্য আয়াতে নূর দ্বারা নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বুঝানো হয়েছে। নিম্নে আরো কয়েকটি প্রসিন্ধ তাফসীরের আলোকে দলিল উপস্থাপন করা হলঃ-

দলিল নং ১

বিশ্ব বিখ্যাত মুফাসসিরে কোরআন হযরত ইবনে আববাস (রাঃ) এর বিশ্ব বিখ্যাত তাফসীর গ্রন্থ ইবনে আববাস এর মধ্যে আছে-

قد جاءكم من الله نور و كتاب مبين يعني محمدا صلي الله عليه ؤسلم-           
অর্থঃ নিশ্চয়ই আল্লাহর নিকট হতে তোমাদের  কাছে নূর অর্থাৎ মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এসেছেন। (তাফসীরে ইবনে আববাস পৃষ্ঠা ৭২)।

দলিল নং ২

ইমাম আবু জাফর মুহাম্মদ ইবনে জারীর আত্-তবারী (রা) তাঁর বিখ্যাত তাফসীর গ্রন্থ ইবনে জারীর এর মধ্যে বলেন-

قد جاءكم من الله نور و كتاب مبين يعني باالنؤر محمدا صلي الله عليه ؤسلم الذي انار الله به الحق واظهربه الاسلام ومحق به الشرك-
অর্থঃ নিশ্চয়ই আল্লাহর নিকট হতে তোমাদের  কাছে নূর অর্থাৎ মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এসেছেন, যে নূর দ্বারা আল্লাহ সত্যকে উজ্জ্বল ও ইসলামকে প্রকাশ করেছেন এবং শিরিককে নিশ্চিহ্ন করেছেন। ( তাফসীরে ইবনে জারীর ৬ষ্ঠ খন্ড, পৃষ্ঠা ৮৬, সূরা মায়িদা আয়াত ১৫)।


দলিল নং ৩

মুহীউস্সুন্নাহ আল্লামা আলাউদ্দীন আলী ইবনে মুহাম্মদ (রাঃ) (যিনি ‘খাজিন’ নামে পরিচিত) তাফসীরে খাজেনের মধ্যে বলেন-

قد جاءكم من الله نور و كتاب مبين يعنى باالنؤر محمدا صلي الله عليه وسلم انما سماه الله نور الانه يهداى بالنور في الظلام-

অর্থঃ নিশ্চয়ই আল্লাহর নিকট হতে তোমাদের  কাছে নূর অর্থাৎ মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এসেছেন। আল্লাহ তায়া’লা তাঁর নামকরণ করেছেন নূর, কারণ তাঁর নূরেতে হেদায়ত লাভ করা যায়। যেভাবে অন্ধকারে নূর দ্বারা পথ পাওয়া যায়। (তাফসীরে খাজিন ১ম খন্ড, পৃষ্ঠা ৪১৭)।

দলিল নং ৪

ইমাম হাফেজ উদ্দীন আবুল বারাকাত আব্দুল্লাহ ইবনে আহমদ আন- নাসাফী (রা) এই আয়াত শরীফ  ( قد جاءكم من الله نور و كتاب مبين) প্রসঙ্গে বলেন-

والنور محمد عليه والسلام لانه يهتداي به كما سمي سراجا منيرا-
আর নূর হলেন মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। কেননা তাঁর নূরেতে হেদায়ত লাভ করা যায়, যেমন তাঁকে উজ্জ্বল প্রদীপ বলা হয়েছে। (তাফসীরে মাদারিক ১ম খন্ড, পৃষ্ঠা ৪১৭)।


দলিল নং ৫

ইমামুল মুতাকাল্লেমীন আল্লামা ফখরুদ্দীন রাযী (রা) এই আয়াত শরীফ  ( قد جاءكم من الله نور و كتاب مبين) প্রসঙ্গে বলেন-

ان المراد بالنور محمد صلي الله عليه و سلم وبالكتاب القران-
অর্থঃ নিশ্চয়ই নূর দ্বারা মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং কিতাব দ্বারা আল কোরআন মজীদকে বুঝানো হয়েছে। (তাফসীরে কবীর ৩য় খন্ড, পৃষ্ঠা ৩৯৫, সূরা মায়িদা আয়াত ১৫)।
আর যারা বলে যে ‘নূর ও কিতাবে মুবীন’ দ্বারা কুরআন মজীদকেই বুঝানো হয়েছে, ইমাম রাযী (রা) সে সম্পর্কে বলেন-

هذا ضعيف لان العطف يوجب المغايرة بين المعطوف والمعطوف عليه-
এই অভিমত দুর্বল, কারণ আতফ (ব্যাকরণগত সংযোজিত) মা‘তুফ (সংযোজিত) ও মা‘তুফ আলাইহি (যা তার সাথে সংযোজন কারা হয়েছে ) এর মধ্যে ভিন্নতা  প্রমাণ করে। (তাফসীরে কবীর ৩য় খন্ড, পৃষ্ঠা ৩৯৫)।


দলিল নং ৬
ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতী (রা) বলেনঃ

قد جاءكم من الله نور هو نور النبى صلي الله عليه وسلم-

অর্থঃ নিশ্চয়ই আল্লাহর নিকট হতে তোমাদের কাছে নূর এসেছে, তা হল নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নূর মোবারক।

 (তাফসীরে জালালাইন শরীফ পৃষ্ঠা ৯৭)


দলিল নং ৭
আল্লামা মাহমূদ আলূসী বাগদাদী (রা) বলেন-

  قد جاءكم من الله نور هو نورعظيم هو نور الانوارالنبى المختار صلى الله عليه وسلم الى ذهب قتادة والزجاج-
অর্থঃ নিশ্চয়ই আল্লাহর নিকট হতে তোমাদের কাছে মহান নূর এসেছে । আর তিনি হলেন নূরুল আনোয়ার নবী মোখতার সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। এটাই হযরত কাতাদাহ ও যুজাজের অভিমত। (তাফসীরে রুহুল মাআনী ৬ষ্ঠ খন্ড, পৃষ্ঠা ৯৭)।
দলিল নং ৮

আল্লামা ইসমাঈল হক্কী (রা) বলেন-

قيل المراد باالاول هو الرسول صلى الله عليه وسلم وبالثانى القران-
অর্থঃ বলা হয়েছে যে, প্রথমটা অর্থাৎ নূর দ্বারা রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে বুঝানো হয়েছে এবং দ্বিতীয়টা অর্থাৎ কিতাবে মুবীন দ্বারা কুরআন কে বুঝানো হয়েছে। (তাফসীরে রুহুল বয়ান ২খন্ড, পৃষ্ঠা ২৬৯)
আর অগ্রসর হয়ে বলেন-

سمى الرسول نورا لان اول شيئ اظهره الحق بنور قدرته من ظلمة العدم كان نور محمد صلي الله عليه و سلم كما قال اول ما خلق الله نورى-
অর্থ: আল্লাহ তায়া‘লা রসূল আকরাম  সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নাম রেখেছেন নূর। কেননা আল্লাহ তায়া‘লা তাঁর কুদরতের নূর থেকে সর্বপ্রথম যা প্রকাশ করেছেন তা তো মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নূর মোবারক। যেমন তিনি ফরমায়েছেন- আল্লাহ তায়া‘লা সর্বপ্রথম আমার নূর মোবারক কে সৃষ্টি করেছেন। (তাফসীরে রুহুল বয়ান ২য় খন্ড, পৃষ্ঠা ৩৬৯)।

দলিল নং ৯
ইমাম মুহীউস সুন্নাহ আবু মু‏হাম্মদ আল- হোসাইন আল-ফাররা আল-বাগাভী (রা) বলেন-

قد جاءكم من الله نور يعنى باالنؤر محمدا صلي الله عليه وسلم-
অর্থঃ নিশ্চয়ই আল্লাহর নিকট হতে তোমাদের  কাছে নূর অর্থাৎ মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এসেছেন। (তাফসীরে মাআলিমুত তান্যীল, ২য় খন্ড, পৃষ্ঠা ২৩, তাফসীরে খাযিনের পাদ টীকা)

এ ছাড়া আরো অনেক তাফসীর গ্রন্থর মধ্যে আছে যে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর নূরঃ-
সুরা মায়েদা পারা ৬, ১৫ নং আয়াতে  নূরের ব্যাখ্যাঃ-
১। তাফসীরে মারেফুল কোরআন পৃষ্ঠা ৫৪। ২। তাফসীরে আবি সউদ ২য় খন্ড, পৃ- ২৫১, ৩। তাফসীরে রুহুল বয়ান ২য় খন্ড, পৃ- ৩৬৯, ৪। তাফসীরে রুহুল মায়ানী ১ম খন্ড, পৃ- ৩৬০, ৬ষ্ঠ খন্ড, পৃষ্ঠা ৯৭, ৫। তাফসীরে ইবনে জারীর ৬ষ্ঠ খন্ড, পৃ- ৮৬, ৬। তাফসীরে কবীর ১১তম খন্ড, পৃ- ১৬৩, ৭। তাফসীরে কুরতুবী ৬ষ্ঠ খন্ড পৃ- ১১৮, ৯। তাফসীরে বায়জাভী ১ম খন্ড, পৃ- ৬৪, ১০। তাফসীরে মাজহারী ৩য় খন্ড, পৃ- ৬৮, ১১। তাফসীরে কবীর ৬ষ্ঠ খন্ড, পৃ- ৪৬২, ১২। ছফওয়াতুত তাফাসীর ২য় খন্ড, পৃ- ১৪০, ১৩। তাফসীরে দুররে মানসুর ২য় খন্ড, পৃ- ১৮৭, তাফসীরে নূরুল কোরআন ৬ষ্ঠ খন্ড, পৃষ্ঠা ১৬১, তাফসীরে নঈমী ৬ষ্ঠ খন্ড, পৃষ্ঠা ২৯৫।
 সূরা তাওবা পারা ১০, ৩২ নং আয়াতে নূরের ব্যাখ্যাঃ-
১। তাফসীরে দুররে মানসুর  ৩ খন্ড, পৃ- ২০১, ২। তাফসীরে কবীর ১৬ম খন্ড, পৃ- ৩৪, ৩। তাফসীরে রুহুল মায়ানী ১৪ম খন্ড, পৃ- ৪৮।
v        সুরা নূর পারা ১৮, আয়াত নং ৩৫ঃ-
১। তাফসীরে ইবনে আববাস ৪র্থ খন্ড, পৃ- ২৪, ২। তাফসীরে রুহুল মায়ানী ১০ম খন্ড, পৃ- ১৬৬।
v        সুরা আহযাব আয়াত নং ৪৬ঃ-
১। তাফসীরে আহকামুল কোরআন লিল ইবনুল আরাবী ৩য় খন্ড, পৃ- ১৫৪৬, ২। তাফসীরে মাওয়ারদী ৪র্থ খন্ড, পৃ- ৪১১।



হাদীস শরীফের আলোকেঃ

দলিল নং ১০


عن جابر بن عبد الله رضى الله عنه قال : قلت يا رسول الله بابى انت وامى اخبرنى عن اول شئ خلق الله تعالى قبل الاشياء ؟ قال يا جابر ان الله تعالى قد خلق قبل الاشياء نورنبيك من نوره فجعل ذالك النور يدور بالقدرة حيث شاء الله تعالى ولم يكن في ذالك الوقت لوح ولا قلم ولا جنة ولا ملك ولا سماء ولا ارض ولا شمس ولا قمر ولا جن ولا انس – فلما اراد الله تعالى ان يخلق الخلق قسم ذالك النور اربعة اجزاء فخلق من الجزء الاول القلم و من الثاني اللوح ومن الثالث العرش ثم قسم الجزء الربع اربعة اجزاء فخلق من الاول حملة العرش ومن الثانى الكرسى ومن الثالث باقى الملائكة ثم قسم الربع اربع اجزاء فخلق من الاول السماوات ومن الثانى الارضين ومن الثالث الجنة والنار—————————————– الخ-
অর্থঃ হযরত জাবের (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আবেদন করলাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমার মা-বাবা আপনার কদম মোবারকে উৎসর্গিত, আপনি দয়া করে বলুন, সকল বস্ত্তর পূর্বে সর্বপ্রথম আল্লাহ তায়া’লা কোন বস্ত্তটি সৃষ্টি করেছিলেন? নবীজী  সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়’লা সমস্ত কিছুর পূর্বে তোমার নবীর (তোমার) নূর মোবারক তাঁরই নূর মোবারক হতে সৃষ্টি করেছেন অতঃপর ওই নূর আল্লাহ তায়’লারই মর্জি মুতাবেক তাঁরই কুদরতি শক্তিতে পরিভ্রমণ করতে লাগল। ওই সময় না ছিল বেহেশ্ত-দোযখ, আর ছিলনা আসমান-যমীন, চন্দ্র-সূর্য, মানব ও দানব। এক পর্যায়ে মহান আল্লাহ যখন সৃষ্টিজগত পয়দা করার মনস্থ করেছিলেন, প্রথমেই ওই নূর মোবারককে চারভাগে বিভক্ত করে প্রথম অংশ দিয়ে কলম, দ্বিতীয় অংশ দিয়ে লওহ, তৃতীয় অংশ দিয়ে আরশ, সৃষ্টি করে চুতুর্থাংশকে পুণরায় চারভাগে বিভক্ত করে প্রথমাংশ দিয়ে আরশবহনকারী ফেরেশতাদের দ্বিতীয় অংশ দ্বারা কুরসী, তৃতীয় অংশ দ্বারা অন্যান্য ফেরেশতাদের সৃষ্টি করে চুতুর্থাংশকে আবারও  চারভাগে বিভক্ত করে প্রথম ভাগ দিয়ে সপ্ত আসমান, দ্বিতীয় ভাগ দিয়ে সপ্ত যমীন, তৃতীয় ভাগ দিয়ে বেহেশত-দোযখ এবং পরবর্তী ভাগ দিয়ে পর্যায়ক্রমে অন্যান্য সকল বস্ত্ত সৃষ্টি করে। (আল মাওয়াহিবুল লাদুনিয়া ১ম খন্ড, পৃষ্ঠা ৭১)।
দলিল নং ১১

عن كعب الخبار رضى الله عنه قال : لما الله ان يخلق المخلوقات بسط الارض وقع السماء وقبض قبصة من نوره و قال لها كونى محمدا فصارت عمودا من نوره فعلا حتى انتهى الى حجب العظمة فسجد و قال فى سجوده الحمد لله فقال الله سبحانه و تعالى لهذا خلقتك و سميتك محمد صلى الله عليه و سلم منك ابدا الخلق و بك اختم الرسل-
অর্থঃ হযরত কাব আহবার (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহ পাক রাববুল আলামিন যখন সৃষ্টি জগত সৃজন করার ইচ্ছা করলেন তখন মাটিকে সস্প্রসারিত করলেন, আকাশকে উঁচু করলেন এবং আপন নূও হতে এক মুষ্ঠি নূর গ্রহন করলেন। তারপর উক্ত নূরকে নির্দেশ দিলেন‘ তুমি মুহাম্ম্দ হয়ে যাও।’ অতএব সে নূও স্তম্ভের ন্যায় উপরের দিকে উঠতে থাকল এবং মহত্বের পর্দা পর্যন্ত পৈাছে সিজদায় পরে বলল,‘আলহামদুলিল্লাহ্’ তখন আল্লাহ্ পাকের পক্ষ থেকে ইরশাদ হল,এজন্যই তোমাকে সৃষ্টি করেছি আর তোমার নাম মুহাম্ম্দ রেখেছি। তোমার হতেই সৃষ্টি কাজ শুরু করব এবং তোমাতেই রিসালাতের ধারা সমাপ্ত করব ।  (সিরাতুল হালাভিয়া ১ম খন্ড, পৃষ্ঠা ৫০)।
দলিল নং ১২


عن عائشة رضي الله عنها قالة : كنة في الشجر ثوبا لرسول الله صلي عليه و سلم فانطفا المصباح و سقطة الابرة من يدي فدخل علي رسول الله صلي الله عليه و سلم فاضاء من نور و جهه فجدة الابرة-
অর্থঃ ‘‘হযরত আয়েশা (রা) হতে বর্ণিত- তিনি বলেন, আমি রাত্রে বাতির আলোতে বসে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাপড় মোবারক সেলাই করেছিলাম। এমন সময় প্রদীপটি (কোন কারণে) নিভে গেল এবং আমি সুচটি হারিয়ে ফেললাম। এরপরই নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অন্ধকার ঘরে প্রবেশ করলেন। তাঁর চেহারা মোবারকের নূরের জ্যোতিতে আমার অন্ধকার ঘর আলোময় হয়ে গেল এবং আমি (ঐ আলোতেই) আমার হারানো সুচটি খুজে পেলাম’’। (ইমাম ইবনে হায়তামী (রাঃ) এর  আন-নে’মাতুল কোবরা আলার আলম গ্রন্থে ৪১ পৃষ্ঠা)।
দলিল নং ১৩

اخرج ابن ابي عمر العدني فى مسنده عن ابن عباس ان قريشا كانت نورا بين يدي الله تعالى قبل ان يخلق ادم بالفى عام يسبح ذالك النور و تسبح الملائكة بتسيحه فلما خلق الله ادم القي ذالك النور فى صلب قال رسول الله صل اله عليه و سلم فاهبطنى الله الى الارض فى صلب ادم (عليه السلام) و جعلنى فى صلب نوح عليه السلام و ق           ف بى فى صلب ابرهيم عليه السلام ثم لم يزل الله ينقلبى من الصلاب الكريمة و الارحام الطاهؤة حتى اخرجنى من بين ابوى لم يلتقيا على سفاح قط-
অর্থঃ  হযরত ইবনে আলী ওমর আল-আদানী স্বীয় মুসনাদে হযরত ইবনে আববাস (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন, হযরত  আদম আলাইহিস সালামকে সৃষ্টি করলেন, তখন তাঁকে তাঁর সন্তানদের পরস্পরের মধ্যে মর্যাদার তারতম্যটুকুও দেখাতে লাগলেন। তিনি ( আদম আলাইহিস সালাম ) তাদের মধ্যে শেষপ্রান্তে একটা উজ্জ্বল নূর দেখাতে পেলেন। তখন তিনি বললেন,‘‘ হে রব! ইনি কে? ( যাকে সবার মধ্যে প্রজ্জ্বলিত নূর হিসাবে দেখতে পাচ্ছি?) উত্তরে মহান রববুল আলামীন ইরশাদ করলেন,‘‘ ইনি হলেন তোমার পুত্র-সন্তান হযরত আহমদ মুজ্তবা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। তিনি প্রথম, তিনি শেষ, তিনি হবেন আমার দরবারে প্রথম সুপারিশকারী (ক্বিয়ামতের দিনে)। ( আল-খাসাইসুল কুবরা ১ম খন্ড, পৃষ্ঠা ৩৯)

দলিল নং ১৪

ইমাম হাফেজ  আবুল ফযল ক্বাযী আয়ায (রা) বলেন-

و قد سماه الله تعالى فى و سراجا منيرا فقال تعالي قد جاءكم من الله نور و كتاب مبين و قال تعالى انا ارسلناك شاهدا و مبشيرا و نذيرا و داعيا الى الله باذنه و سراجا منيرا و قال فى غير هذا الموضع انه كان لاظل لشخصه في شمس و لا قمر لانه كان نورا الذباب كان لا يقع على جسده و لا ثيابه-
অর্থঃ নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়া‘লা কোরআন করীমে তাঁর নাম রেখেছেন নূর ও সিরাজুম্ মুনীর। যেমন তিনি ফরমায়েছেন, নিশ্চয়ই আল্লাহর নিকট হতে তোমাদের কাছে নূর ও স্পষ্ট কিতাব এসেছে। আরো ফরমায়াছেন, আমি তো আপনাকে পাঠিয়েছি হাজের ও নাজেররূপে, আল্লাহর অনুমক্রিমে তাঁর দিকে আহবানকারীরূপে এবং উজ্জ্বল প্রদীপ (সিরাজুম মুনীর ) রূপে। নিশ্চয়ই তাঁর ছায়া ছিল না. না সূর্য়ালোকে না চন্দ্রালোকে কারণ তিনি ছিলেন নূর। তাঁর শরীল ও পোশাক মোবারকে মাছি বসত না। (শিফা শরীফ ২য় খন্ড, পৃষ্ঠা ২৪২)।
দলিল নং ১৫


وعن ابلى هريرة رضى الله عنه ان رسول الله صلى الله عليه و سلم سائل جبريل عليه السلام فقال يا جبريل كم عمرك من السنين فقال يا رسول الله مست اعلم غير ان فى الحجاب الرابع نجما يطلع في سبعين الف سنة مرة رايته اثنين و سبعين الف مرة فقال يا جبريل و عزة ربى جل جلا له انا ذالك الكوب-

অর্থঃ হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন , রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একদা জিবা্রঈল আলায়হিস সালামকে জিজ্ঞেসা করলেন , ওহে জিব্রাঈল! তোমার বয়স কত? উত্তরে জিব্রাঈল বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি তো সঠিক জানি না। তবে এতটুকু বলতে পারি ( সৃষ্টি জগত সৃষ্টির পূর্বে) আল্লাহ তায়‘লা নূরানী আযমতের পর্দা সমূহের চতুর্খ পর্দায় একটি নূরানী তারকা সত্তর হাজার বছর পরপর উদিত হত। আমি আমার জীবনে সেই নূরানী তারকা বাহাত্তর হাজার বার উদিত হতে দেখেছি। অতঃপর নবী পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ও সাল্লাম ইরশাদ  করলেন মহান রাববুল আলামীনের ইজ্জতের কসম করে বলছি, সেই অত্যুজ্জ্বল নূরানী তারকা আমিই ছিলাম। (সীরাতে হালাভীয়া পৃষ্ঠা ৪৯, তাফসীরে রুহুল বয়ান পৃষ্ঠা ৫৪৩)।
দলিল নং ১৬

لم يكن له صلى الله عليه و سلم ظل في شمس و لا قمر لانه كان نورا-

অর্থঃ ‘‘সূর্য চন্দ্রের আলোতে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দেহ মোবারকের ছায়া পড়তোনা। কেননা, তিনি ছিলেন আপদমস্তক নূর’’।                                                                                          (যুরকানী শরীফ ৪র্থ খন্ড, পৃষ্ঠা ২২০)।

এ ছাড়া আরো অনেক হাদীস শরীফ গ্রন্থ এর মধ্যে আছে যে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর নূর তা নিম্নরূপঃ-
১। মিশকাত শরীফ পৃষ্ঠা ৫১৩, ২৪ এর ১০নং হাশিয়া, ৫১১ এর ৬নং হাশিয়া,   তিরমিজি শরীফ ২য় খন্ড, পৃষ্ঠা ৩৭, মাওয়াহিবে লাদুনিয়া পৃষ্ঠা ৪৫,শরহে সুন্নাহ ১০ম খন্ড, পৃষ্ঠা ২০৭, মিরকাত ১ম খন্ড, পৃষ্ঠা ১৪৬,১৬৬,১৯৪। তিরমিজি শরীফ ২য় খন্ড, প- ৩৭, মাজমুওয়ায়ে ফাতাওয়ার ২য় খন্ড, পৃ- ২৮৬, ১৮। নশরুততীব পৃ- ৫, কৃতঃ আশরাফ আলী থানবী, ১৯। এমদাদুছ ছুলূক পৃষ্ঠা  কৃতঃ রশিদ আহমেদ গাংগুহী । ২০। শুকরে নিয়ামত কৃতঃ কাসেম নানুতুবী, গাওহারে সিরাজী পৃষ্ঠা ৬৯, কৃতঃ সিরাজুল ইসলাম।

নামায ভঙ্গের কারন সমূহঃ

যে সকল কাজ দ্বারা নামায নষ্ট হয়, তাকেমোফছেদাতে নামাজবলে ঐরূপ কাজ করলে নামায পুনরায় পড়তে হয় 
যেমনঃ-
) নামাযের মধ্যে আজান্তে, ভ্রমে, ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় কথাবার্তা বলা।
) কাওকে ছালাম দেয়া।
) ছালামের উত্তর দেওয়া।
) উঃ আঃ শব্দ করা।
) বেদনা অথবা শোকে শব্দ করে ক্রন্দন করা।
) বিনা ওজরে কান্না।
) নামাযের কোন ফরয ত্যাগ করা।
) ছতরের একচতুর্থাংশ পর্যন্ত কাপড় আলগা হয়ে যাওয়া।
) কোরান শরীফ খুলে পড়া।
১০) নাপাক স্থানে সেজদা করা।
১১) হাচির উত্তরেইয়ারহামুকুমুল্লাহবলা।
১২) পানাহার করা।
১৩) প্রত্যেক রোকনে দুইবারে অতিরিক্ত চুলকান।
১৪) সুসংবাদেআলহামদুলি্লল্লাহএবং দুঃসংবাদেইন্নালিল্লাপড়া।
১৫) ইমামের পূর্বে মোক্তাদির কোন রোকন আদায় করা

হযরত খিযির ও মূসা (আঃ)-এর এক অসাধারন কাহিনী

হযরত ইবনু আব্বাস (রা:) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, হযরত উবাই ইবনু কা‘ব (রা:) রাসূলুল্লাহ (সা:) হ’তে আমাদের নিকট বর্ণনা করেছেন যে, হযরত মূসা (আঃ) একদা বনী ইসরাঈলের এক সমাবেশে ভাষণ দিতে দাঁড়ালে তাঁকে জিজ্ঞেস করা হ’ল, কোন ব্যক্তি সর্বাধিক জ্ঞানী? তিনি বললেন, আমিই সর্বাধিক জ্ঞানী। জ্ঞানকে আল্লাহর দিকে সোপর্দ না করার কারণে আল্লাহ্‌ তাকে তিরস্কার করে বললেন, বরং দু’সাগরের সঙ্গমস্থলে আমার এক বান্দা আছে, যিনি তোমার চেয়ে অধিক জ্ঞানী।
হযরত মূসা (আঃ) বললেন, ‘হে আমার প্রতিপালক! তার নিকট পৌছাতে কে আমাকে সাহায্য্ করবে? কখনো সুফইয়ান এভাবে বর্ণনা করেছেন, আমি কিভাবে তাঁর সাথে সাক্ষাৎ করতে পারি? তখন বলা হ’ল, তুমি একটি থলিতে করে একটি মাছ নাও। যেখানে তুমি মাছটি হারাবে, সেখানেই আমার সে বান্দা আছে। অতঃপর হযরত মূসা (আঃ) একটি মাছ ধরলেন এবং থলিতে রাখলেন।অতঃপর মাছ নিয়ে তাঁর সঙ্গী ইউশা বিন নূনকে সাথে নিয়ে চললেন।শেষ পর্যন্ত তারা একটি পাথরের কাছে পৌছলেন এবং তার উপর মাথা রেখে বিশ্রাম নিলেন।মূসা (আঃ) ঘুমিয়ে পড়লেন। এ সময় মাছটি থলি থেকে বের হয়ে লাফিয়ে সমুদ্রে চলে গেল।অতঃপর সে সমুদ্রে সুড়ঙ্গের মত পথ করে নিল।আর আল্লাহ্‌ মাছটির চলার পথে পানির প্রবাহ থামিয়ে দিলেন।ফলে তার গমনপথটি সুড়ঙ্গের মত হয়ে গেল।অতঃপর তারা উভয়ে অবশিষ্ট রাত এবং পুরো দিন পথ চললেন।
পরদিন সকালে হযরত মূসা (আঃ) তার সাথীকে বললেন, আমরা তো সফরে ক্লান্ত হয়ে পড়েছি, আমাদের খাবার নিয়ে এস।হযরত মূসা (আঃ)-কে আল্লাহ্‌ যে স্থানে যাবার কথা বলেছিলেন, সেই স্থান অতিক্রম করার পূর্ব পর্যন্ত তিনি কোনরূপ ক্লান্তিবোধ করেননি। সাথী ইউশা বিন নুন তখন বলল, আপনি কি ভেবে দেখেছেন, যে পাথরটির নিকট আমরা বিশ্রাম নিয়েছিলাম সেখানেই মাছটি অদ্ভুতভাবে সমুদ্রের মধ্যে চলে গেছে।কিন্তু আমি মাছটির কথা আপনাকে বলতে ভুলে গিয়েছিলাম। মূলত: শয়তানই আমাকে এ কথা ভুলিয়ে দিয়েছে। বর্ণনাকারী বলেন, পথটি মাছের জন্য ছিল একটি সুড়ঙ্গের মত আর তাঁদের জন্য ছিল আশ্চর্যজনক ব্যাপার।
হযরত মূসা (আঃ) বললেন, আমরা তো সেই স্থানটিরই অনুসন্ধান করছি।অতঃপর তারা তাদের পদচিহ্ন ধরে ফিরে চললেন এবং ঐ পাথরের নিকটে পৌঁছে দেখলেন, এক ব্যক্তি কাপড় মুড়ি দিয়ে বসে আছেন। মূসা (আঃ) তাঁকে সালাম দিলেন। তিনি সালামের জবাব দিয়ে বললেন, এখানে সালাম কি করে এলো? তিনি বললেন, আমি মূসা। খিযির জিজ্ঞেস করলেন, আপনি কি বনী ইসরাঈল বংশীয় মূসা? মূসা (আঃ) বললেন, হ্যাঁ। আমি এসেছি এজন্য যে, সত্য পথের যে জ্ঞান আপনাকে দান করা হয়েছে, তা হ’তে আপনি আমাকে শিক্ষা দিবেন। খিযির বললেন, হে মূসা! আমার আল্লাহ্‌ প্রদত্ত কিছু জ্ঞান আছে, যা আপনি জানেন না। আর আপনিও আল্লাহ্‌ প্রদত্ত এমন কিছু জ্ঞানের অধিকারী, যা আমি জানি না। মূসা (আঃ) বললেন, আমি কি আপনার সাথী হ’তে পারি? খিযির বললেন, ‘আপনি কিছুতেই আমার সাথে ধৈর্যধারণ করতে পারবেন না। যে বিষয় আপনার জ্ঞানের আওতাধীন নয় সে বিষয়ে আপনি ধৈর্যধারণ করবেন কেমন করে?’ মূসা (আঃ) বললেন, ‘ইনশাআল্লাহ্‌ আপনি আমাকে ধৈর্যশীল পাবেন এবং আপনার কোন আদেশ আমি অমান্য করব না’ (কাহফ ৬৭-৬৯) ।
অতঃপর তাঁরা দু’জনে সাগরের কিনারা ধরে হেঁটে চললেন। তখন একটি নৌকা তাদের পাশ দিয়ে যাচ্ছিল। তারা তাদেরকে নৌকায় তুলে নেওয়ার জন্য অনুরোধ করলেন। তারা খিযির-কে চিনতে পেরে বিনা ভাড়ায় তাঁদেরকে নৌকায় তুলে নিলো। যখন তাঁরা দু’জনে নৌকায় চড়লেন, তখন একটি চড়ুই পাখি এসে নৌকাটির কিনারায় বসল এবং সমুদ্র থেকে এক ফোঁটা বা দুই ফোঁটা পানি পান করল। খিযির বললেন, ‘হে মুসা! আমার ও আপনার জ্ঞানের দ্বারা আল্লাহ্‌ জ্ঞান হ’তে ততটুকুও কমেনি যত টুকু এ পাখিটি তাঁর ঠোটের দ্বারা সাগরের পানি হ্রাস করেছে’।
তখন খিযির একটি কুড়াল নিয়ে নৌকাটির একটা তক্তা খুলে ফেললেন। মূসা (আঃ) অকস্মাৎ দৃষ্টি দিতেই দেখতে পেলেন যে, তিনি কুড়াল দিয়ে একটি তক্তা খুলে ফেলেছেন। তখন তিনি তাঁকে বললেন, আপনি একি করলেন? এ লোকেরা বিনা ভাড়ায় আমাদেরকে নৌকায় তুলে নিলো, আর আপনি তাদেরকে ডুবিয়ে দেয়ার জন্য নৌকা ছিদ্র করে দিলেন? আপনি তো একটি গুরুতর কাজ করলেন। খিযির বললেন, আমি কি বলিনি যে, আপনি আমার সাথে ধৈর্যধারণ করতে পারবেন না। মূসা (আঃ) বললেন, আমার ভুলের জন্য আমাকে অপরাধী করবেন না এবং আমার এ ব্যবহারে আমার প্রতি কঠোর হবেন না।মূসা (আঃ)-এর পক্ষ থেকে প্রথম এ কথাটি ছিল ভুলক্রমে।
অতঃপর তাঁরা যখন উভয়ে সমুদ্র পার হলেন, তখন তারা একটি বালকের পাশ দিয়ে অতিক্রম করলেন, যে অন্যান্য বালকদের সাথে খেলা করছিল।খিযির ছেলেটির মাথা দেহ হ’তে ছিন্ন করে ফেললেন। হযরত মুসা (আঃ) বললেন, আপনি একটি নিষ্পাপ শিশুকে বিনা অপরাধে হত্যা করলেন? আপনি খুবই খারাপ একটা কাজ করলেন। খিযির বললেন, আমি কি বলিনি যে, আপনি আমার সাথে ধৈর্যধারণ করতে পারবেন না। মূসা (আঃ) বললেন, এরপর যদি আমি আপনাকে আর কোন প্রশ্ন করি, তাহ’লে আমাকে আর সঙ্গে রাখবেন না।অতঃপর উভয়ে চলতে লাগলেন। চলতে চলতে তাঁরা একটি জনপদের অধিবাসীদের নিকট পৌঁছে তাদের নিকট কিছু খাবার চাইলেন। কিন্তু জনপদ বাসী তাদের দু’জনের মেহমানদারী করতে অস্বীকার করল।সেখানে তারা একটি প্রাচীর দেখতে পেলেন, যা ভেঙ্গে পড়ার উপক্রম হয়েছিল।হযরত খিযির প্রাচীরটি মেরামত করে সুদৃঢ় করে দিলেন।হযরত মুসা (আঃ) বললেন, এই বসতির লোকদের নিকট এসে আমরা খাবার চাইলাম।তারা মেহমানদারী করতে অস্বীকার করল।অথচ আপনি এদের দেয়াল সোজা করে দিলেন।আপনি তো ইচ্ছা করলে এর জন্য পারিশ্রমিক গ্রহণ করতে পারতেন।হযরত খিযির বললেন, এবার আমার এবং আপনার মধ্যে বিচ্ছেদ হয়ে গেল।এক্ষণে যে বিষয়ে আপনি ধৈর্যধারণ করতে পারেননি, আমি এর তাৎপর্য বলে দিচ্ছি।
নৌকাটির ব্যাপার ছিল এই যে, সেটি ছিল কয়েকজন দরিদ্র ব্যক্তির।তারা সমুদ্রে জীবিকা অন্বেষণ করত।আমি নৌকাটিকে ত্রুটিযুক্ত করে দিতে চাইলাম। কারণ, তাদের সামনে ছিল এক রাজা, যে ভাল নৌকা পেলেই জোরপূর্বক কেড়ে নিত। তারপর যখন এটাকে দখল করতে লোক আসল, তখন ছিদ্রযুক্ত দেখে ছেড়ে দিল। অতঃপর নৌকাওয়ালারা একটা কাঠ দ্বারা নৌকাটি মেরামত করে নিলো।আর বালকটি সূচনা লগ্নেই ছিল কাফের। আর সে ছিল তার ঈমানদার বাবা- মার বড়ই আদরের সন্তান । আমি আশঙ্কা করলাম যে, সে বড় হয়ে অবাধ্যতা ও কুফরি দ্বারা তাদেরকে কষ্ট দিবে। অতঃপর আমি ইচ্ছা করলাম যে, তাদের পালনকর্তা তাদেরকে তার চেয়ে পবিত্রতায় ও ভালবাসায় ঘনিষ্ঠতর একটি শ্রেষ্ঠ সন্তান দান করুন।আর প্রাচীরের ব্যাপার এই যে, সেটি ছিল নগরের দু’জন ইয়াতীম বালকের। এর নীচে ছিল তাদের গুপ্তধন। তাদের পিতা ছিলেন সৎকর্ম পরায়ণ। সুতরাং আপনার পালনকর্তা দয়াপরবেশ হয়ে ইচ্ছা পোষণ করলেন যে, তারা যৌবনে পদার্পণ করে নিজেদের গুপ্তধন উদ্ধার করুক। আমি নিজ ইচ্ছায় এসব করিনি। আপনি যে বিষয়গুলোতে ধৈর্যধারণ করতে পারেননি, এই হ’ল তার ব্যাখ্যা ।
(কাহফ ৭৯-৮২; ছহীহ বুখারী হা/৩৪০১
আল্লাহ যখন যা করেন, বান্দার ভালোর জন্যেই করেন , , , আলহামদুলিল্লাহ

বিবেকের কাঠগড়ায় বিশ্ব ইজতেমা

এখানে আরো একটি বিষয় লক্ষণীয় যে দেশের স্বাধীনতা লাভের পর থেকে দেশের প্রধান দুটি রাজনৈতিক দলের মহামান্য প্রধানগন আপন আপন ক্ষমতায় থাকাকালে তাবলীগ জামাতের আবেদনের ভিত্তিতে টঙ্গীর বিরাট , ভু-খন্ড তাদেরকে প্রদান করেছেন আর উভয় দলই ইসলামের জন্য তাদের অবদানের তালিকায় এদের প্রতি প্রদর্শিত বিরাট বদান্যতাকে বিশেষভাবে উল্লেখ করে থাকে। ক্রমশঃ প্রাত্যেক ক্ষমতাসীন সরকারের আন্তরিকতা আরো ব্যাপক হতে থাকে   তাছাড়া বিটিবি এবং দেশের কিছু পত্র পত্রিকা ইত্যাদির প্রচারণা, সরকারের বিশেষ ব্যবস্তাপনা, মহামান্য রাষ্টপ্রদান ও মাননীয় সরকার প্রধান, সম্মানিত বিরোধী দলীয় প্রদান ও রাজীনৈতিক নেতৃবৃন্দের ওই মুনাজত এ শরীক হওয়া ইত্যাদি কারণে টঙ্গীর জমায়েতের পরিসর ক্রমশঃ বিগত বছরগুলোকেও ছড়িয়ে যাচ্ছে। অবশ্য, এ সম্পর্কে দেশের প্রচার মাধ্যমগুলোর বদান্যতায় অনেকে বিস্তারিতভাবে চেনেছেন সব মিলিয়ে এখন সেটা তাদের ভাষায় বিশ্ব ইজতিমা।
উল্লেখ্য, প্রায়শঃ তাবলীগ জামাতের জন্মস্তান ভারত থেকে আগত দিল্লীর কেন্দ্রীয় তাবলীগ জামাতের সদস্য ও শীর্ষ মুরব্বী মুনাজাত পরিচালনা করেন অংশগ্রহণকারীরাও একযোগে আ-মীন বলেন। অনেকে কান্নাকাটিও করেন বৈ-কি। এখানে আমার বক্তব্য হচ্ছে- একদিকে সরকার তো তার দায়িত্ব পালন করেছে আর সরলপ্রাণ মুসলমানরাও অন্তত এক বড় জমায়েতে মুনাজাত করাকে একটি বিরাট ধর্মীয় কাজ মনে করছেন, অন্যদিকে এটা অত্যান্ত  দুঃখের সাতে আশঙ্কাও করা যাচ্ছে যে তাবলীগ জামাতের চতুর্থা ও দেশের মুসলমানদের সরলতা, সর্বপরি সচেতন সুন্নী মুসলমানদের নীরবতা ওই তাবলীগ জামাতের আসল পরিচয় ও উদ্দেশ্যকে এক গাঢ় আড়ালে দ্রুত ঢাকা দিতে যাচ্ছে কিনা। আর এ আড়ালের সুবাদে তারাও এ দেশকে সহসা ওহাবীরাষ্টে পরিণত করার সুযোগ নিতে যাচ্ছে কিনা তদুপরি, বর্তমানে দমিত ও গা-ঢাকা দেওয়া জঙ্গি খারেজী (জেএমবি ও হরকাতুল জিহাদ ইত্যাদি) অদুর ভবিষ্যত এক পর্যায়ে গিয়ে আরো মারাত্মক আকার ধারণ করতে যাচ্ছে কিনা তাও ভেবে দেখার সময় এসেছে।
তাই আমি সচেতন সুন্নী ওলামা ও মুসলমানদের পক্ষ থেকে এ তাবলীগ জামাত ও তাদের মূল উাদ্দেশ্য এবং এ জামাতের এ পর্যন্ত কর্মকান্ডের ফলাফল সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোকপাত করার চেষ্টা করব যাতে ইজতিমার বিশালতা ও মুনাজাত এর আড়ম্বরতায় মুগ্ধ হয়ে এদেশের মুসলমানগন তাদের আসল পরিচয় ভুলে না বসেন। আমি আমার ঈমানী দায়িত্ব টুকু পালন করতে চাই  সেটার প্রতি গুরুত্ব দেওয়া বা না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেবেন যারা তাদেরকে নির্বিচারে ইসলামী জামাত মনে করেন বিশেষভাবে তারা এবং সাধারণভাবে অন্যরা।
তাবলীগ জামাতের গোড়ার কথা।
এ কথা সুস্পষ্ট যে ভারতের সাইয়্যিদ আহমদ ব্রেলভী ও মৌলভী ইসমাঈল দেহলবী সৌদিয়া থেকে এ উপমহাদেশে ওহাবী মতবাদ সর্বপ্রথম আমদানি করার পর ভারতে নাদওয়াতুল ওলামা ও দারুল উলুম দেওবন্দ মাদরাসা ইত্যাদি ওহাবী মতবাদের গবেষণা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা লাভ করে। এ  দেওবন্দ মাদরাসার অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা হলেন- মৌং মুহাম্মদ কাসেম নানুতবী। আর মৌং আশরাফ আলী থানভী মৌং রশীদ আহমদ গাঙ্গুহী এবং মৌং খলীল আহমদ আন্বেটবী প্রমুখ ছিলেন এ উপমহাদেশে ওই মতবাদ প্রচারের পুরোধা। এ মৌং আশরাফ আলী থানভী সাহেবের অন্যতম প্রধান শীষ্য ছিলেন মৌং ইলিয়াস সাহেব এ মতবাদ প্রচারের জন্যই তাবলীগ জামাত প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এ জামাত প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে তার উদ্দেশ্য সম্পর্কে তিনি বলেন যে, তাবলীগ জামাতের কর্মপদ্ধিতি হবে তার নিজের উদ্ভাবিত কিন্তু প্রচারের বিষয়বস্তু ও শিক্ষা হবে তার পরম  শ্রদ্ধেয় ওস্তাদ মৌং আশরাফ আলী থানভীর।
[তাবলীগী জামাআত খত্বরনাক কৃত মাওলানা এরশাদ আল কাদেরী ভারত]
এখন দেখুন মৌং আশরাফ আলী থানবী সাহেবের শিক্ষা কি? তার আক্কিদা ও শিক্ষা হচ্ছে অবিকল সমস্ত দেওবন্দী আলিমদের আক্বীদা ও শিক্ষা। আর এ আক্বীদা ও শিক্ষার প্রচার ও প্রসারের একমাত্র উদ্দেশ্যেই মৌং ইলয়াস সাহেব কায়েম করেছেন তাবলীগের ছয় উসূল। গোটা তাবলীগ জামাতই এ ছয় উসূল প্রতিষ্ঠা করে বেড়ায়। টঙ্গীর  তথাকথিত বিশ্ব ইজতিমায় ছয় উসূল ও তাদের বাস্তবায়ন নিয়ে চিল্লাবদ্ধ মুসল্লীদের উদ্দেশে হিদায়াতী (নিদ্যেশনামূলক)  বয়ান দেওয়া হয়।
[দৈনিক পূর্বকোণ, ২৯ জানুয়ারী ২০০৬ সংখ্যা ইত্যাদি।
উল্লেখ্য ওই ছয় উসূলের ইসলামের পঞ্চবুনিয়াদ থেকে নেয়া হয়েছে মাত্র দুটি। যথা- ১. কালেমা ও ২. নাময। আর বাকী ৪ টা হচ্ছে ৩.ইকরামুল মুসলিমীন,৪. তাসীহ-ই নিয়্যাত (উদ্দেশ্য ঠিক করা)।
আর মৌং আশরাফ আলী থানেভীসহ দেওবন্দী দের আক্বীদা ও শিক্ষা হচ্ছে-
১. আল্লাহ মিথ্যা বলতে পারেন।
[ফতোয়া-ই- রশীদিয়া, ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা-৯, কৃত মৌং রশীদ আহমদ গাঙ্গুহী দেওবন্দী]
২. আল্লাহ আগে জানেন না বান্দা কি কাজ করবে। বান্দা যখন কাজ সম্প্ন করে নেয় তখনই আল্লাহ তা জানতে পারেন।
[তাপসীর-ই- বুলগাতুল হায়রান পৃষ্ঠা ১৫৭-৫৮, কৃত মৌং হুসাইন আলী দেওবন্দী]
৩. শয়তান ও মালাকুল মাওত এর জ্ঞান হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামার চেয়ে বেশি।
[বারাহীন-ই ক্বাতিআহ পৃষ্ঠা- ৫১ কৃত খলীল আহমদ আম্বেটভী দেওবন্দী]
৪. আল্লাহর নবীর নিকট নিজের পরিণতি এবং দেয়ালের পিছনের জ্ঞানও নেই।
[বারাহীন-ই ক্বাতি আহ পৃষ্টা ৫১, কৃত খলীল আহমদ আম্বেটভী দেওবন্দী]
৫. নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আল্লাহ তায়ালা তেমনি জ্ঞান দান করেছেন যেমন জ্ঞান জানোয়ার পাগর এবং শিশুদের নিকট রয়েছে।
[হিফজুল ঈমান পৃষ্ঠা-৭ কৃত মৌং আশরাফ আলী থানভী দেওবন্দী]
৬. নামাযে নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামার প্রতি শুধু খেয়াল যাওয়া গরু গাধার খেয়ালে ডুবে যাওয়া অপেক্ষাও মন্দতর।
[সিরাতে মু্স্তাকিম পৃষ্ঠা-৮৬ কৃত মৌং ইসমাঈল দেহলভী ওহাবী]
৭. রাহমাতুল্লীল আলামীন (সমস্ত বিশ্বের জন্য রহমত) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামার খাস উপাধি নয় নবীজী ছাড়া অন্যন্য বুযুর্গকেও রাহমাতুল্লিল আলামীন বলা যেতে পারে।
[ফতোয়া-ই রশীদিয়া ২য় খণ্ড পৃষ্ঠা-১২ কৃত মৌং রশীদ আহমদ গাঙ্গুহী দেওবন্দী]
৮. খাতামুন্নাবিয়্যিন অর্থ আখেরী বা শেষনবী বুঝে নেওয়া সাধারন লোকদের খেয়াল মাত্র জ্ঞানী লোদের মতে এ  অর্থ বিশুদ্ধ নয়। হুযুর আকরামের যুগের পরও যদি কোন নবী পয়দা হয় তবে হযররত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামার শেষ নবী হওয়ার কোন ক্ষতি হবে না।
[তাহযীরুন্নাছ পৃষ্ঠা-৩ ও ২৫৪ কৃত দারুল উলুম দেওবন্দ মাদরাসার অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা মৌং কাসেম নানুতবী]
৯. নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দেওবন্দের আলেমদের সাথে সম্পর্কের সুবাদে উর্দু শিখতে পেরেছেন।
[বারাহীন-ই ক্বাতিয়াহ, পৃষ্ঠা ২৬ কৃত মৌং খলীল আহমদ আম্বেটভী দেওবন্দী]
১০. নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামার সম্মান শুধু বড় ভাইয়ের মতই করা চাই।  
[তাক্বভিয়াতুর ঈমান পৃষ্ঠা-৫৮ কৃত মৌং ঈসমাঈল  দেহলভী ওহাবী]
১১. আল্লাহ তায়ালা ইচ্ছা করলে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সমকক্ষ কোটি কোটি পয়দা করতে পারেন।
[তাক্বভিয়াতুল ঈমান পৃষ্ঠা ১৬ কৃত মৌং ইসমাঈল দেহলভী ওহাবী]
১২. নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মরে মাটিতে মিশে গেছেন।
[তাক্বভিয়াতুল ঈমান পৃষ্ঠা-৫৯ কৃত মৌং ইসমাঈল দেহলভী ওহাবী]
১৩. নবী প্রতিটি মিথ্যা থেকে পবিত্র ও মাসুম হওয়া বাঞ্ছনীয় নয়।
[তাক্বভিয়াতুল আকাঈদ পৃষ্ঠা ২৫ কৃত মৌং কাসেম নানুতবী]
১৪.নবী রাসূল সবাই অকেজো।
[তাক্বভিয়াতুল ঈমান পৃষ্ঠা-৬২৯ কৃত মৌং ইসমাঈল দেহলভী]
১৫. নবীর প্রশংসা শুধু মানুষের মতই কারো বরং তা অপেক্ষাও সংক্ষিপ্ত কর।
[তাক্বভিয়াতুল ঈমান পৃষ্ঠা ৬১ কৃত মৌং ইসমাঈল দেহলভী ওহাবী]
১৬. বড় মাখলুক অর্থাৎ নবী আর ছোট মাখলুক অর্থাৎ অন্যসব বান্দা আল্লাহর শান বা মর্যাদার সামনে চামার অপেক্ষাও নিকৃষ্ট।
[তাক্বভিয়াতুল ঈমান পৃষ্ঠা ১৪ কৃত  মৌং ইসমাঈল দেহলবী ওহাবী]
১৭. বড় অর্থাৎ নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আর ছোট অর্থাৎ অন্যসব বান্দা বেখবর ও অজ্ঞ।
[তাক্বভিয়াতুল ঈমান পৃষ্ঠা-৩ কৃত মৌং ইসমাঈল দেহলভী ওহাবী]
১৮. নবীকে তাগুত (শয়াতান বলা জায়েয।
[তাফসীর-ই বুলগাতুল হায়রান পৃষ্ঠা-৪৩ কৃত মৌং হুসাইন আলী ওয়াভচরান  ওয়ালা]
১৯. নবীর মর্যাদা উম্মতের মধ্যে গ্রামের চৌধুরী ও জমিদারের মত।
[তাক্বভিয়াতুল ঈমান পৃষ্ঠা-৬১ কৃত মৌং ইসমাঈল দেহলভী ওহাবী]
২০. যার নাম মুহাম্মাদ কিংবা আলী তিনি কোন কিছুই করতে পারেন না।
[তাক্বভিয়াতুল ঈমান পৃষ্ঠা-৪১ কৃত মৌং ইসমাঈল দেহলভী ওহাবী]
২১. উম্মত বাহ্যিকভাবে আমলের মধ্যে নবী থেকেও বেড়ে যায়।
[তাহযীরুন্নাছ পৃষ্ঠা-৫ কৃত দারুল উলুম  দেওবন্দ মাদরাসা অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা মৌং কাসেম নানুতভী]
২২. দেওবন্দী মোল্লা নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে পুলসেরাত হতে পতিত  হওয়া থেকে রক্ষা করেছেন।
[তাফসীর-ই বুলগাতুল হায়রান পৃষ্ঠা-৪৩ কৃত মৌং হুসাইন আলী ওয়াভচরান ওয়ালা]
২৩. লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু আশরাফ আলী রাসুলুল্লাহ আর আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা সায়্যিদিনা ওয়া নবীয়্যিনা আশরাফ আলী বলার মধ্যে সান্ত্বনা রয়েছে কোন ক্ষতি নেই।
[রিসালা-ই ইমদাদ পৃষ্ঠা-৩৫ সফর-১৩৩৬ হিজরি সংখ্যা]
২৪. মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উদযাপন করা তেমনি যেমন হিন্দুরা তাদের কানাইয়্যার জন্মদিন পালন করে।
[বারাহীন-ই ক্বাতিয়াহ পৃষ্ঠা-১৪৮ কৃত মৌং খলীল আহমদ আম্বেটভী দেওবন্দী]
২৫. আল্লাহর সামনে সমস্ত নবী ও ওলী একটা নাপাক ফোটা অপেক্ষাও নগণ্য।
[তাক্বভিয়াতুল ঈমান পৃষ্ঠা-৫৬ কৃত মৌং ইসমাঈল  দেহলভী ওহাবী]
২৬. নবীকে নিজের ভাই বলা দুরস্ত।
[বারাহীন-ই ক্বাতিয়াহ পৃষ্ঠা-৫৬ কৃত মৌং খলীল আহমদ আম্বেটভী দেওবন্দী]
২৭. নবী ও ওলীকে আল্লাহর সৃষ্টি ও বান্দা জেনেও উকিল এবং সুপারিশকারী মনে করে এমন মুসলমান সাহায্যের জন্য  আহবানকারী ও নযর নিয়াযকারী মুসলমান আর কাফির আবু জাহল শির্কের মধ্যে সমান ।
[তাক্বভিয়াতুল ঈমান পৃষ্ঠা-৭-২৭ কৃত মৌং ইসমাঈল দেহলভী ওহাবী]
২৮. দরূদ ই তাজ অপছন্দনীয় এবং পাঠ করা নিষেধ।
ফযাইলে দরূদ শরীফ পৃষ্ঠা-৯২ ফাযাইলে আমল তথা তাবলীগী নেসাব থেকে পৃথক্বৃত]
২৯. মীলাদ শরীফ মিরাজ শরীফ ওরস শরীফ খতম শরীফ চেহলামে ফাতিহাখানি এবং ঈসালে সাওয়াব সবই নাজায়েয ভুল প্রথা বিদআত এবং কাফির ও হিন্দুদের প্রথা।
[ফতোয়া-ই রশীদিয়া ৩য় খণ্ড পৃষ্ঠা-৯৩-৯৪, কৃত মৌং রশদি আহমদ গাঙ্গুহী দেওবন্দী]
৩০. প্রসিদ্ধ কাক খাওয়া সাওয়াব।
[ফতোয়া-ই রশীদিয়া ৩য় খণ্ড পৃষ্ঠা-১৩০ কৃত মৌং রশীদ আহমদ গাঙ্গুহী দেওবন্দী]
৩১. হিন্দুদের হোলী দেওয়ালীর প্রসাদ ইত্যাদি জায়েয।
[ফতোয়া-ই রশীদিয়া ২য় খণ্ড পৃষ্ঠা-১৩২ কৃত মৌং রশীদ আহমদ গাঙ্গুহী দেওবন্দী]
৩২. ভাঙ্গী চামারের ঘরের রুটি ইত্যাদির মধ্যে কোন দোষ নেই যদি পাক হয়।
[ফাতোয়া-ই রশীদিয়া ২য় খণ্ড পৃষ্ঠা ১৩০ কৃত মৌং রশীদ আহমদ গাঙ্গুহী দেওবন্দী]
৩৩. হিন্দুদের সুদী টাকায় উপার্জিত অর্থে কূপ বা নফকূপের পানি পান করা জায়েয।
[ফতোয়া-ই রশীদিয়া ৩য় খণ্ড পৃষ্ঠা ১১৩-১১৪ কৃত মৌং রশীদ আহমদ গাঙ্গুহী দেওবন্দী]
নাঊযুবিল্লাহ সুম্মা নাউযু বিল্লাহ মিনহা।
 এখানে বিশেষভাবে লক্ষণীয় যে তাবলীগ জামাতের আক্বীদা ও আমল দেওন্দী ওহাবীদের আক্বীদা ও আমলের সাথে মোটেই বিরোধপূর্ণ নয় বরং এক ও অভিন্ন।
এসব আক্বিদা ও আমলকে তাবলীগ জামাত তা ছয় উসূলের মাধ্যমে প্রচার ও প্রতিষ্ঠা করার জন্য তৎপর। টঙ্গীর ইজতিমার প্রধান লক্ষ্যও এটাকে আরো ব্যাপক করা।
২০০৬ সালের তাবলীগী ইজতিমার খবরে প্রকাশ ইজতিমা প্যান্ডেলের উত্তর দিকে স্থাপিত তাশকীলের কামরায় নতুন করে বিভিন্ন মেয়াদের চিল্লায় তালিকাভুক্ত মুসল্লীদের স্থান দেওয়া হয়েছে। তালিকাভুক্ত জামাতীদের বিভিন্ন খেত্তা থেকে তাশকীলের কামরায় আনা হয় এবং জামাতবন্দী করা হয়। তালিকাভুক্ত হয়েছেন (২য় দিনে) প্রায় ছয় হাজার। চুড়ান্তভাবে এলাকা ভাগ করে দেশের বিভিন্ন এলাকায় এসব মুসল্লীকে কাকরাইল মসজিদ থেকে জামাতবন্দী করে দেশের বিভিন্ন স্থানে ও বিদেশে পাঠানো হবে।
[দৈনিক পূর্বকোন,-২৯ জানুয়ারী ২০০৬]
সুতরাং তাবলীগ ও তাদের ইজতিমা সম্পর্কে নিম্বলিখিত বিষয়গুলোর প্রতি মনযোগ দেওয়া জরুরি মনে করি-
প্রথমতঃ যে কোন আমল ক্ববুল হবার পূর্বশর্ত হচ্ছে বিশুদ্ধ আক্বীদা। আর এ বিশুদ্ধ আক্বীদা হচ্ছে একমাত্র আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াত এর আক্বাইদ। ভ্রান্ত আক্বাইদ পোষণ করলে কোন আমলই আল্লাহর দরবারে গ্রহণযোগ্য হয় না।
দ্বিতীয়তঃ ইসলামের একমাত্র সঠিক রূপরেখা হচ্ছে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়েতের সম্পূর্ণ বিপরীত। বস্তুতঃ তাদের আক্বীদা ও আমল ওই খারেজী মতবাদেরই অনুরূপ, যারা পবিত্র হাদিসের ভাষায় ইসলামী নামের ভ্রান্ত ৭২ বহাত্তর দলের মধ্যে সর্বপ্রথম দল। [সিহাহ ও শরহে মাওয়াক্বিফ ইত্যাদি]
তৃতীয়তঃ ওহাবী তাবলীগপন্থী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো বাংলাদেশ সরকারের অধীনে পরিচালিত বাংলাদেশ মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড এর পাঠ্যক্রম অনুসরণ করেনা তারা অনুসরণ করে  ভারতের দেওবন্দ মাদরাসার পাঠ্যাক্রম শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ পদ্ধতি।[দৈনিক ইনকিলাব এ প্রকাশিত ক্রোড়পত্র]
উল্লেখ্য আহলে হাদীসের ড. গালিব শায়খ আবদুর রহমান সিদ্দীকুর রহমান বাংলাভাই প্রমুখ এবং নিষিদ্ধ ঘোষিত তাদের সংগঠনগুলোর সদস্যরা হয়তো এসব খারেজী মাদরাসায় শিক্ষাপ্রাপ্ত নতুবা তাবলীগপন্থী। (বিটিভিতে প্রচারিত অনুতাপ কারীদের কেউ কেউ স্বীকারও করেছে যে তারা তাবলীগপন্থী)।
তাছাড়া আহলে হাদীস সম্প্রদায়টি মূলতঃ ওহাবীদের একটি অংশ। পার্থক্য শুধু এতটুকু যে আহলে হাদীসের লোকেরা মাযহাব মানেনা। অন্যান্য আক্বীদা ও আমল প্রায় এক ও অভিন্ন। সুতরাং তাবলীগ জামাতের অগ্রযাত্রার সাথে সাথে প্রকারান্তরে ওই সব ধর্মের নামে বিশৃঙ্খলাবাদীদের ক্ষমতাবৃদ্ধির আশঙ্কাও উড়িয়ে দেবার মত নয়।
চতুর্থতঃ এদেশে সুন্নী মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ ওহাবীরা নয়। কিন্তু এসব ওহাবী ক্বওমী তাবলীগীরা সংখ্যালুঘু সুরভ ঐক্য বাহ্যিক বেশ ভূয়া জামাতবন্দিতা ও সুচতুরতা সর্বোপরি একই মতবাদী বিদেশীদের পৃষ্ঠপোষকতা (যেমন- বর্তমান সৌদিয়া প্রভাবিত আরবীয়রা) এবং অব্যাহত কর্মতৎপরতার মাধ্যমে তাদের অবস্থানকে উল্লেখযোগ্য পর্যায়ের বলে প্রদর্শণ করে আসছে। এরই পরম্পারায় এরা প্রাগ একাত্তরকালীন  সময়ে পাকিস্তানী হানাদারদের ছত্রছায়ায় কোন ভুমিকায় ছিল তা হয়তো দেশবাসী বিভিন্ন কারণে ভুলে যাচ্ছে বিগত জোট সরকারের সাথে অংশীদারিত্বের সুবাদে তারাই সুন্নী মুসলমানদের উপর নানাভাবে আঘাত হানতে আরম্ভ করেছিল বলে পর্যবেক্ষক মহলের ধারণা। হযরত শাহ জালাল  রাহমাতুল্লাহি আলাইহির মাযারে ওরসে মুনাজাত চলাকালে বোমা মেরে যা ইরীন হত্যা ওই মাযার এবং চট্রগ্রামের হযরত বায়েজীদ বোস্তমী রাহমাতুল্লাহি আলাইহির মাযারের পুকুরে বিষ প্রায়োজ করে মাছ ইত্যাদি হত্যা করা এরই প্রকৃষ্ঠ দৃষ্টান্ত বৈ-কি। (তাদের ভবিষ্যত পরিকল্পানা সম্পর্কে এখনো জানা যায়নি।
পঞ্চমতঃ তাবলীগী ইজতিমার এ কয়েক বছরের জমায়েতকে তারা মুসলিম বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম ইসলামী জমায়েত বলে চমক লাগাতে চাচ্ছে অথচ পাকিস্তানের মুলতানে নিয়মিতভাবে অনুষ্ঠিত সুন্নী তাবলীগ দাওয়াহ-ই ইসলামীর জমায়েত এটার চেয়ে বড় বলে জানা গেছে। সে দেশের কোন কোন পত্রিকা ও প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষায় প্রতি বছর সেখানে প্রায় ৪৫ লক্ষাধিক মুসলমানের জমায়েত হয় বলে জানা যায় যদিও পাকিস্তানে সরকার কিংবা খোদ দাওয়াত-ই ইসলামীর (সবুজ পাগড়িধারী সুন্নী তাবলীগ জামায়াত) পক্ষ থেকে সেটার ব্যাপকভাবে প্রচারটুকুও করা হয় না।
ষষ্ঠতঃ বিশ্বের কয়েকটা দেশের নিছক ওহাবী তাবলীগীদের কিছু লোকের উপস্থিতির কারণে এ ইজতিমাকে বিশ্ব ইজতিমা হজ্বতুল্য জমায়েত ইত্যাদি বলার পক্ষে যুক্তি অগ্রহণযোগ্য। দেশ বিদেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠী খাটি সুন্নী নবী ওলীগণের প্রকৃত আশেক ভক্ত সুন্নী পীর মাশাইখ ও তাদের ভক্ত মুরীদান এবং মাযারভক্ত মুসলমানরা এ তাবলীগ জামাত এবং ওহাবী খারেজীদেরকে তাদের জঘন্য আক্বীদাও কর্মকাণ্ডের কারণে মোটেই পছন্দ করেন না বরং মানুষের ঈমান আক্বীদা এমনকি বিভিন্ন কারণে দেশ ও জাতির শান্তি সমৃদ্ধির পথে হুমকি মনে করেন তা সরেযমীনে তদন্ত বা জরীপ চলালে সুস্পষ্ঠভাবে বুঝা যাবে। তদুপরি একটি সুন্নী মতাদর্শ বিরোধী সম্পদায়ের কর্মকাণ্ডকে ক্রমশঃ দেশের জাতীয় কর্মসূচীতে পরিণত করার মত বদান্যতা প্রদর্শনের মাধ্যমে তাদেরকে উৎসাহিত করার ফলে ক্ষমতাসীন সরকার দেশের বৃহত্তম সুন্নী জনগোষ্ঠীর বিগভাজন হচ্ছে কিনা তাও সরকারের ভেবে দেখা দরকার কারণ এ তাবলীগী ওহাবীদের উত্থানকে দেশের সুন্নী মুসলমানগণ এক অশুভ সঙ্কেত বলে মনে করেন এ সঙ্কেত কখনো বাস্তবরূপ ধারণ করলে তা কারো জন্য মঙ্গলময় হবে না বলা যায় বিভিন্ন যুক্তির ভিত্তিতে ওই টঙ্গীতে ইজতিমাস্থলকে সব মুসলমানের জন্য উন্মুক্ত  করে দেওয়ার জন্য কোন  কোন মহল দাবী তুলেছেন বলে জানা গেছে।
প্রসঙ্গঃ উল্লেখ্য যে এভাবে তারা নিজেরদের পকৃত পরিচয় গোপন করতে গিয়ে একতরফাভাবে এমনি প্রচারণ চালিয়ে এসেছে যে এখন তাদের আসল পরিচয় তুলে ধরলে অনেকের নিকট অবিশ্বাস্য মনে হবে। বিশ্বাস করতে কষ্ট হবে যে এমন জামাত ও জামাতের মুরব্বীদের এ ধরনের জঘন্য আক্বীদা থাকতে পারে উদাহরণস্বরূপ তাবলীগ জামাতের প্রতিষ্ঠাতা মৌং ইলয়াসের শিক্ষাগুরু ও অনুকরনীয় বুযুর্গ এবং উপমাহদেশে গাটা ওহাবী সম্প্রদায়ের নিকট বরণীয় ব্যাক্তি তাদের হাকীমুল উম্মত মৌং আশরাফ আলী থানভী সাহেবের কথা ধরুন। ওহাবীরা প্রচার করেছে তিনি বড় বুযুর্গ ব্যাক্তি ছিলেন। তার নামে রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন বহু কিতাব পত্রও তিনি লিখেছেন। কিন্তু যখনই বলা হবে যে তিনি তার লিখিত হিফযুল ঈমান এ নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামার জ্ঞানকে জানোয়ার পাগল ও শিশুদের জ্ঞানের সাথে তুলনা করে কুফরী করেছেন তাকে আলা হযরত ইমাম শাহ আহমদ রেজা ব্রেলভী রহমাতুল্লাহি আলাইহি এবং হেরমাঈন শরীফাঈনের ৩৩ জন আলিম তার এবং আরো কয়েকজন দেওবন্দী আলিমের কুফর প্রমাণিত করে এ ফতোয়া জারী করা সত্ত্বেও তিনি তার কুফরী  বাক্যকে প্রত্যাহার করে ঈমানের পথ অবলম্বন করেননি বরং তার মৃত্যুর পর দেওবন্দী  ওহাবীরাও তার ভুল স্বীকার করেননি তখন হয়তো অনেকে আতকে ওঠবেন আর দেওবন্দী ভাবধারার ওহাবী তাবলীগীরা বলে বেড়াবেন সুন্নীরা তাদের মুরুব্বীকে কাফের বলছেন ইত্যাদি।
এখানে একটি কথা বিশেষভাবে রক্ষণীয় যে ওহাবী তাবলীগী দেওবন্দীরা তাদের মুরব্বীদের কুফরীকেও মেনে নিয়ে তাদের পক্ষে প্রচারণ চালানোর যতই বাহ্যিক চাকচিক্যপূর্ণ আয়োজন করুক না কেন উপমহাদেশের সুন্নী মুসলমানগণ তাদের মিষ্টি কথায় ভুলেনি ভুলবেও না বরং তাদের ও তাদের মুরব্বীদের কুফরী ও গোমরাহীপূর্ণ আক্বীদাগুলো প্রত্যাহার করে নিয়ে তাওবা পূর্বক আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের মতাদর্শ অবলম্বন না করা পর্যন্ত তাদের সাথে কোনরূপ আপোস করবেন না করতেও পারেন না। আর এ জন্য কোন বিবেকবান মানুষ সুন্নীদেরকে দায়ীও করবেন না। কারণ ধর্মে বিভ্রান্তি ছাড়ানোর জন্য ওই ওহাবী দেওবন্দীরাই দায়ী সুন্নীগণ এ ক্ষেত্রে তাদের ঈমানী দায়িত্ব পালন করেন মাত্র।
সপ্তমতঃ প্রসঙ্গতঃ সচেতন সুন্নী কর্ণধারবুন্দেন ঈমান দায়িত্ব পালন ও দেওবন্দী ওহাবীদের হটকারিতা প্রসঙ্গে আলোচনা করার প্রয়াস পেলাম। বারতে ওহাবী মতাবাদ প্রচারের প্রাথমিক পর্যায়ে মৌলভী ইসমাঈল দেলভী মুহাম্মদ ইবনে আব্দুল ওহাব নজদীর বিতর্কিত পুস্তক কিতাবুত তাওহীদ এর ভাবানুবাদ তাক্বভিয়াতুল ঈমান প্রকাশ করে বিশেষতঃ নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সমকক্ষ থাকা সম্ভব বলে প্রচার করে খাতামুন্নাবিয়্যিন ইত্যাদি গুণাবলী দ্বারা গুণান্বিত আরো কেউ আত্মাপ্রকাশ করাও সম্ভব বলে ফেললো তখন আহরে সুন্নাতের ওলামা-ই কেরাম বিশেষ করে খাতেমুর হুকামা আল্লামা মুহাম্মদ ফযলে হক খায়রবাদী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি তাদের ওই ভুল ও ঈমানবিধ্বংসী দৃষ্টিভঙ্গির খণ্ডন করেছেন লিখিত ও মৌখিকভাবে। তবুও না ইসমাঈল দেহলভী তার কথা প্রত্যাহার করেছে,
তাছাড়া মীর্যা গোলাম আহমদ ক্বাদিয়ানী ভণ্ড নবূয়্যতের দাবিদার হয়ে মুরতাদ হল। মুসলমানরা একবাক্যে তাকে ধিক্কার দিল। এ দেশের সুন্নীদের সাথে ওহাবীরাও তাকে কাফির-মুরতাদ বলার ক্ষেত্রে সুর মিলানো তারা সেটাকে রাজনৈতিক ইস্যু করে ক্বাদিয়ানীদের অমুসলমান ষোষণা করার দাবিও করেছে। অথচ ইতোপূর্বে তাদেরই মুরব্বী দেওবন্দ মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতা মৌং কাসেম নানুতভী কোরআনী আয়াতের খাতাম শব্দের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে আমাদের নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর পরে কোন নবী আসলে নবীজির শেষনবী হবার মধ্যে অসুবিধা নেই বলে ফতোয়া দিয়ে ওই গোলাম আহমদ ক্বাদিয়ানীর জন্য পথ খুলে দিয়েছেন। দেওবন্দী মুফতী মৌং রশীদ আহমদ গাঙ্গুহী আল্লাহর পক্ষে মিথ্যা বলা সম্ভব বলে ফতোয়া দেন। মৌং খলীল আহমদ আম্বেটভী নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর জ্ঞানকে পশু শিশু ও পাগলের জ্ঞানের সাথে তুলনা করেছেন। বস্তুতঃ এসব মন্তব্য যে যথাক্রমে আল্লাহ ও তার হাবীবের শানে জঘন্য বেআদবী হবার কারণে নিশ্চিত কুফর তা বিবেকবান মাত্রই বলতে পারে।
ইমামে আহলে সুন্নাত মুজাদ্দিদে মিল্লাহ শাহ ই বেরেলী ইমাম আহমদ রেযা খান রাহমাতুল্লাহি আলাইহি তাদের ওই সব মুন্তব্য ও আক্বীদা গভীরভাবে পর্যালোচনা করেছেন। শতাধিকবিষয়ের বিশারদ সহস্রাধিক গ্রন্থ পুস্তকের রচয়িতা অদ্বিতীয় ফিক্বহাশাস্ত্রবিদ আলা হযরতের দৃষ্টিতেও ওই সব মন্তব্য নিশ্চিত কুফর বলে সাব্যস্ত হলে তিনি প্রত্যেকের নিকট জবাব চিঠি লিখেছেন। কিন্তু দীর্ঘদিন তাদেরকে সুযোগ দিয়েছেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাদের পক্ষ থেকে কোনরূপ  জবাব কিংবা অনুশোচনা পত্যাহারের মনোভাব না পেয়ে বরং হঠকারিতা সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে ১৩২০ হিজরিতে আল মুতামাদ আল-মুন্তাক্বাদ প্রণয়ন করে মীর্যা ক্বাদিয়ানী মৌং কাসেম নানুতভী ,মৌং রশীদ আহমদ গাঙ্গুহী , মৌং খলীল আহমদ আম্বেটভী এবং মৌং আশরাফ আলী থানভীর উপর ওই সব মন্তব্যের ভিত্তিতে কুপরের ফতোয়া আরোপ করলেন। (এর ব্যাখ্যাগ্রন্থ প্রণীত হয় আল মুতামাদ আল মুস্তানাদ নামে)।
অষ্ঠমতঃ সর্বোপরি টঙ্গীর ইজতিমার সফর করে যাওয়া তাদের মুরব্বীদের ফতোয়া অনুযায়ীও হারাম এবং অবৈধ। কারণ, তাবলীগ জামাত-এর উৎসপুরুষ হলেন মুহাম্মদ ইবনে আব্দুল ওহাব নজদী। এ ইবনে আব্দুল ওহাবের ধর্মীয় ও রাজনৈতিক গুরু হলেন ইবনে তাইমিয়্যাহ। দেওবন্দী আমিরগণও ইবনে তহাইমিয়্যার চিন্তাধারার সমর্থক। ইবনে তাইমিয়্যার মতে, তিন মসজিদ ব্যাতীত অন্য কোথাও এমনকি নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বরকতময় যিয়ারতের উদ্দেশ্যে সপর করা যাবে না। তারই অনুসরণে মৌং আব্দুর রহীম ওহাবী তার সুন্নাত ও বিদআত এর মধ্যে লিখেছেন নবী করিম  এর যিয়ারতের উদ্দেশ্যে সফর করা যাবেনা যেতে চাইলে মসজিদে নববীর যিয়ারত বা তাতে নামায পড়ার উদ্দেশ্যেই যেতে হবে। ওহাবীপন্থী যেমন- মি. মওদূদী ওহাবী প্রমুখ খাজা গরীবে নাওয়াজ ও হযরত সালার-ই মাসঊদের মাযারে যাওয়াকে জঘন্য  পাপ বলে ফতোয়া দিয়েছে অথচ নবী করিম  সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর রওযা ই পাকের যিয়ারত সম্পর্কে হাদীস শরীফে বহু ফযীলত বর্ণিত হয়েছে পবিত্র  ক্বোরআনে নবীজির দরবারে যাওয়ার মহা উপকার এরশাদ হচ্ছে। বিশ্বের ইমামগণ পর্যন্ত নবীপাক এবং ওলীগণের রওযা ও মাযার যিয়ারতের উদ্দেশ্যে সফর করেছেন। কিন্তু টঙ্গীর উদ্দেশ্যে সফর করার তাতে হাজ্বীদের মত অবস্থান করার এবং তাদের চিল্লাগুলোয় যোগদান করে জামাতবন্দী হয়ে ওহাবিয়্যত প্রচার করার পক্ষে শরীয়তের কোন প্রমাণ তো নেইই বরং উল্টো তাদের মুরব্বীদের ফতোয়া কঠোরভাবে নিষেধই পাওয়া যায়। সহীহ হাদীস শরীফে নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন ইয়া কুম-ওয়া-ইয়া-হুম (তোমরা তাদের কাছে যেওনা তাদেরকে তোমাদের কাছে আসতে দিওনা)। অথচ এ ইজতিমা আসলে তাবলীগীরা তো আছেই তাদের সঙ্গে সরলপ্রাণ মুসরমানগণ জরুরি কাজ-কর্ম বাদ দিয়ে ওদিকে ধাবিত হয়। অফিস-আদালত, এমনকি হাসপাতাল-ক্লিনিকের কাজ-কর্ম পর্যন্ত ব্যাহত হয়। সরকারকে ব্যাস্ত থাকতে হয়, তাদেরকে সামাল দিতে। রেল কর্তৃপক্ষ ঠিকমত ভাড়া পায় কিনা তাও সন্দেহপূর্ণ।
পরিশেষে, কারো নিছক বাহ্যিক অবস্থা দেখে ভুলে না গিয়ে তার মূল ও প্রকৃত অবস্থার খোজ-খবর নিয়ে পা বাড়ানোই হবে বুদ্ধিমানের কাজ। অন্যথায়, মহাক্ষতির সম্মুখীন হওয়া অনিবার্য। উপরিউক্ত বর্ণনা থেকে এ কথা সুস্পষ্ট হর যে, তাবলীগ জামাত ও তাদের ইজতিমার বাহ্যিকরূপ যা-ই হোক না কেন তাদের মূল হচ্ছে ওহাবী খারেজীর মতবাদ অনুসরণ। তাদের আসার উদ্দেশ্যেই হচ্ছে এ দেশে ওহাবী মতবাদ প্রচার করা। এ মতবাদ সুন্নী মতাদর্শের সম্পূর্ণ বিপরীত। তাই তাদের ইজতিমা ও মুনাজাতেরও কোন গুরুত্ব নেই। ইসলামে তাবলীগ বা অমুসলমানদের নিকট ধর্মপ্রচার এবং তালীম বা দ্বীনের বিসয়াদির শিক্ষাদানের গুরুত্ব আছে সুতরাং এ তাবলীগ ও তা‘লীমের প্রসার উভয় জগতের কল্যাণ বয়ে আনবে যদি ইসলামের সঠিক রূপরেখার (সুন্নী মতাদর্শের) প্রচারণা ও শিক্ষা দেওয়া হয়। সুখের বিষয় যে, মাওলানা ইলিয়া আত্ত্বার ক্বাদেরী রেজভী সাহেব দাওয়াত-ই ইসলামী প্রতিষ্ঠা করে মুসরমানদের এ চাহিদা পূরণ করেছেন। সবুজ পাগড়ী তাদের বিশেষ চিহ্ন। সুন্নাতের অনুসরণ তাদের ভূষণ। তাই, এ বিকল্প। আসুন আমরা যেন সবসময় সুন্নী মতাদর্শের উপরই অটল থাকতে পারি। আল্লাহ পাক তাওফ্বীক্ব দিন আ-মী-ন্।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মানুষের মনের কথা জানেন

হযরত সালমাহ ইবনে আকওয়া(রা.) হতে বর্ণনা করেছেন- তিনি নবীজির সাথে ছিলেন হঠাত্একজন লোক এসে নবীজিকে বললো, ''আপনি কে?'' হুযুর করীম বললেন, ''আমি নবী'' সে তখন বললো, ''নবী কাকে বলে?'' হুযুর করীম বললেন, ''আল্লাহর প্রেরিত রাসূলকে'' সে বললো, ''কিয়ামত কবে আসবে?'' হুযুর এরশাদ করলেন,''এটা গায়েবের বিষয় আর গায়েব আল্লাহ ব্যতীত (তাঁর জানানো ব্যতিরেকে) কেউ জানেনা'' সে তখন বললো, ''আপনার তরবারী'টা আমাকে দেখান!'' তখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আপন তরবারী তাকে দিয়ে দিলেন সে তরবারীটি ভালভাবে দেখলো তারপর তরবারীখানা হুযুরকে ফেরত দিলো অতঃপর তার উদ্দেশ্যে হুযুর করীম বললেন, ''শোন!তুমি কখনো ওই জঘন্য কর্মটি করতে সক্ষম হবেনা,যেটির ইচ্ছা করেছিলে!'' সে বললো, ''নিঃসন্দেহে আমার ইচ্ছা তাই ছিলো''
         এর পরক্ষণে নবীজি এরশাদ করেছেন-লোকটি এলো আর মনে মনে প্রতিজ্ঞা করলো যে, ''গিয়ে প্রশ্ন করতে থাকবো।তারপর তলোয়ার নিয়ে তাঁকে ক্বতল করে ফেলবো।'' কিন্তু শেষ পর্যন্ত সে তলোয়ার খাপের মধ্যে রেখে দিলো।
 
সূত্রঃ খাসাইসুল কুবরা

কলম সম্রাট ইমাম গায্যালী (রঃ)

ভূমিকা :- ইমাম গায্‌যালী। এটি কোন অপরিচিত বা কোন নতুন নাম নয়। মানুষের আত্নিক উন্নয়ন সাধনের জন্য তিনি রেখে গেছেন একসাগর অবদান। মানব জাতির জ্ঞান ভান্ডারে ইমাম গায্‌যালীর গ্রন্থরাজি হীরক খন্ডের মতো বর্ণালি আলো ছড়িয়ে চলছে নিত্য দিবস, হউক সে, মুসলিম বা অন্য কিছু। তিনি মূলত ৫ম শতাব্দীতে প্রকাশিত নূর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর মোজেযা। যখন মুসলমান হিংসা, বিদ্বেস,অহংকার, গিবত, লোভ, হারাম, কীবর, কিজব, কিনা, ফাসাদ, বখিল রোগে আক্রান্ত্ম হয়ে কিংকর্তব্যবিমূড় হয়ে স্ববিরোধী কার্যালাপে মন দিয়ে ঝুকে পরেছিল সেই সময়, নয় পূর্বে কিংবা পরে, এসব থেকে মানুষকে তার আসল স্বভাবকে ইয়াদ করিয়ে দিয়েছেন ইমাম গায্‌যালী। তিনি মানুষকে তওবা, এনাবত, যোহদ, শুকর, তায়াক্কুল, কানাত, তাসলিম, রেজা, সবুর নামে এসব গুনে গুনান্বিত হওয়ার উদাত্ব আহ্ববায়ক। ইমাম গায্‌যালীকে তাসাউফের জীবন দাতা ও বলা হয়। এ বিশাল মনীষীর বর্নাঢ্য জীবন থেকে, সামান্য থেকে সামান্য নিম্নে অংকন করলাম এজন্য যে, যাতে সেই ঐতিহ্য ও তাসাউফ আবার স্বরণ করি।
জন্ম :-
ইমাম গায্‌যালীর জন্ম স্থান নিয়ে ঐতিহাসিক গনের মধ্যেমত বিরোধ বিদ্যমান। আল্লামা সামানী বলেন- ইরান এর খোরাসানের তুস প্রদেশের গায্‌যালানামক গ্রামে ইমাম গায্‌যালী জন্ম গ্রহণ করেন। কিছু সংখ্যক ঐতিহাসিকদের মতে তুস নগরের উপকন্ঠে গায্‌যালানামে কোন গ্রাম ছিল না ; বরং তুরুস্ক প্রদেশের তাহরাননামক স্থানে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি হিজরী ৪৫০ সন মোতাবেক ১০৫৮ খিষ্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন।
নাম ও বংশ পরিচয় :-
ইমাম গায্‌যালীর নাম আবু হামেদ মুহাম্মদ। তার মূল নাম মুহাম্মদ। উপাধি হুজ্জাতুল ইসলাম ও জয়নুল আবেদীন। পিতা মুহাম্মদ। দাদা আহমদ। ইমাম সাহেবের দাদা ছিলেন একজন নেতৃস্থানীয় ও গণ্য মান্য ব্যক্তি। ইমাম সাহেবকে গায্‌যালী বলা হয়, যেহেতু গায্‌যালা অর্থ সুতা ব্যবসা। ইমাম সাহেবের বংশ গত পেশা ছিল সুতা পাকিয়ে বিক্রয় করা।
বাল্যকাল ও শিক্ষাজীবন :-
তৎকালীন সময়ে জ্ঞান আহরনের সুবর্ন সুযোগ থাকা সর্ত্ত্বেও কোন এক অপরিচিত কারনে ইমাম সাহেবের পিতা জ্ঞান অর্জনের সুযোগ লাভে বঞ্জিত হন। এ দুঃখ তাকে সর্বদা তাড়াদিত। তিনি (পিতা) দুই ছেলে মুহাম্মদ ও আহমদকে বাল্য বয়সে রেখে ইন্ত্মেকাল করেন। ইন্ত্মিকালের পূর্বে তার
ফাজিল বি.এ (অনার্স) ২য় বর্ষ (আল-কোরআন এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ)
জনৈক বিশ্বস্ত্ম ও অন্ত্মরঙ্গ বন্ধুকে জীবনের সমুদয় সম্পদের অনেকটা ভাগ দিলেন এবং এ অর্থ দিয়ে তার বৎসদ্বয়কে শিক্ষার ব্যবস্থা করার অনুরোধ রাখলেন। সে মুহুর্তে তিনি স্বীয় বন্ধুকে সম্বোধন করে অশ্রু গদগদ কন্ঠে বললেন আমি জ্ঞানার্জনের সুযোগ লাভের পরেও বঞ্জিত হয়ে আজীবন দারুণ অনুতাপে দগ্ধ হয়েছি। অন্ত্মরঙ্গ বন্ধু আপনার নিকট আমার অনুরোধ অনুগ্রহ পূর্বক এ শিশুদ্বয়ের বিদ্যা শিক্ষার সুযোগ করবেন। তারা জ্ঞান অর্জন করতে পারলে, আমি আশা করতে পারি তাদের জ্ঞান লাভের উছিলায় আমার এ অনুতাপ অনেকটা কমে আসবে
তার ইন্ত্মিকালের পর দুই পুত্রই বিশাল জ্ঞানের অধিকারী হয়ে ছিলেন। ফলত: জ্যৈষ্ঠ পুত্র মুহাম্মদ পরে ইমাম মুহাম্মদ গায্‌যালী এবং কনিষ্ঠ পুত্র আহমদ ইমাম আহমদ গায্‌যালী নামে সুনাম কুড়ান। ইমাম সাহেবের পিতা ইন্ত্মেকালের পর তার বন্ধু উভয়কে স্থায়ী মসজিদ সংলগ্ন মক্তবে ভর্তি করান। শিশুদ্বয় শৈশব থেকে অসাধারণ মেধার অধিকারী ছিল বলে কম সময়ে তারা মহাগ্রন্থ আল কোরআন হিফয করেন। তারপর আরবি ভাষায় মনোনিবেশ করেন।
ইমাম সাহেবের পিতা যে অর্থ তার বন্ধুকে দিয়েছিল তা ইতিমধ্যে সমাপ্তি দেখাদিল। বাবার সেই জনৈক বন্ধু বললেন, তোমাদের যে অর্থ ছিল সবশেষ হয়ে গেছে। আমার অবস্থা ক্রমশয় শোচনীয় হতে চলল, তিনি বললেন তোমরা দুই ভাই এখন এমন জায়গায় ভর্তি হও যেখানে মাদরাসা কর্তৃপক্ষ গরীব শিক্ষার্থীদের সকল কিছুর ভার গ্রহন করে। বাবার বন্ধুর পরামর্শ অনুযায়ী ইমাম সাহেব একটি অবৈতনিক মাদ্‌রাসা পেয়ে গেলেন। যা দিল ইমাম সাহেবের পাশ্ববর্তী এলাকার। সেথায় তিনি ফিকহ্‌ এর প্রাথমিক কিতাবাদি হযরত আহমদ ইবনে মুহাম্মদ রাজকানীর নিকট অধ্যয়ন করেন।
অতঃপর ইমাম সাহেব উচ্চ শিক্ষা অর্জন মানসে স্বীয় ভূমি ত্যাগ করে জোরকানশহরে গিয়ে শাস্ত্রবিদ, যুগশ্রেষ্ঠআলেম ইমাম আবু নছর ইসমাঈলের তত্ত্বাবধানে লেখা পড়া শুরু করলেন। তৎকালীন যুগে একটি প্রচলিত রীতি ছিল যা ওস্ত্মাদ পড়াবেন তা লিখে রাখতে হবে। যা লিখে রাখা হয় তাকে তা লিকাতবলা হয়। ইমাম সাহেব যখন জোরকানশহরে পড়া শুনা শেষ করে বাড়িতে রওনা দিলেন। পথিমধ্যে ডাকাত দল তার তা লিকাতসহ সকল কিছু নিয়ে গেল। তিনি চিন্ত্মিত ও পেরেশান অবস্থায় ডাকাত দলের সর্দারকে বললেন; আমাকে কিছু দিতে হবে না। শুধু মাত্র আমার জ্ঞানের জুড়িটা তা লিকাতগুলি দিয়ে দিন। ডাকাত সর্দার বললেন; তুমি কেমন জ্ঞানী? তোমার জ্ঞান কাগজের পাতায়; তারপর তিনি দিয়ে দিলেন। ইমাম সাহেব সর্দারের কথা মনে রেখে ক্ষোভের সাথে সকল তা লিকাতকন্ঠস্থ করে ফেললেন।
তারপর ইমাম সাহেব জ্ঞান আহরনের তার মন আরো তীব্র থেকে তীব্র হতে লাগল। তারপর তিনি তৎকালীন জ্ঞানের শহর খোরাসানের নিশাপুর নিজামিয়া মাদ্‌রাসায় অধ্যয়ন শুরু করেন। যেখানে ইমামুল হারামাইনউপাধি প্রাপ্ত জনৈক কাল জয়ী আলিম ছিলেন। ইমাম সাহেব তার শারগিত্ব লাভ করেন।
শিক্ষকতা :-

ইমাম সাহেবের পান্ডিত্ব ও সকল শাস্ত্রে দখলের খবর ছিল সর্বত্র আলোচিত। এ সব খবর শুনার পর তৎকালীন প্রধান মন্ত্রী নিজামুল হক ইমাম সাহেবকে বাগদানের প্রধান মাদ্‌রাসা, মাদ্‌রাসায়ে নিজামিয়ার অধ্যক্ষ পদে আসিন করেন। তখন তার বয়স ছিল ৩৪ বছর। ইমাম সাহেব প্রসঙ্গত কারণে দুইবার নিজামিয়া মাদ্‌রাসা থেকে পদত্যাগ করে। সর্বশেষ বার বাদ্‌শা তাকে পুন:রায় যোগ দানের জন্য অনুরোধ করে। তিনি বলেন আমি হযরত ইবরাহিম আলাইহিস সালাম এর মাজার জিয়ারত করে তিনটি শপথ করেছি (১) কদাচ কোন বাদ্‌শাহের দরবারে যাব না। (২) কোন বাদ্‌শা থেকে হাদিয়া/বৃত্তি গ্রহণ করবো না। (৩) সবার সাথে বাহাছ/তর্ক করবো না। ইনশাআল্লাহ মৃত্যু পর্যন্ত্ম তা রক্ষা করবো।
তাছাউফে অবদান :-
এ যাবত কাল পর্যন্ত্ম তাসাউফের উপর যত লিখনি প্রকাশ পেয়েছেন তার মধ্যে শতে আশি হলো ইমাম সাহেবের। তিনি হযরত জুনাইদ বোগদানী, বাইজিদ বোস্ত্মামী, শিবলী সহ যুগশ্রেষ্ঠ সুফিয়ায়ে কেরামের বই পড়েছেন। ইমাম সাহেব অধ্যাপনার থেকে ত্যাগ করে তিনি বাগদাদে অবস্থান করেন। তারপর অনেক দিন একাকি বসবাস করেন। তিনি যখন বাগদাদ ত্যাগ করেন তখন উত্তম পোষাকের পরির্বতে একটি মাত্র কম্বল নিয়ে বের হন। সুস্বাদু খাবারের পরিবর্তে শাক লতা পাতার প্রতিবেশি মনোযোগী হন।
পীর গ্রহণ :-
ইমাম সাহেব খুব কম বয়সে ইলমে জাহেরের সাথে ইলমে বাতেনের শিক্ষা নেওয়ার জন্য তৎকালীন সু বিখ্যাত বুজুর্গ, কামেল সূফী, শায়েখ আবু আলী ফারমাদী রহমতুল্লাহি আলাইহি হাতে বায়াত গ্রহণ করেন। তখন তিনি ছাত্র ছিলেন।
লেখনি :-
ইমাম সাহেবের লেখনি ছিল খুরদার। ইমাম সাহেবের দ্রুত কলম চালনা সম্পর্কে ঐতিহাসিক তীব্বী বলেন, “ইমাম সাহেবের আয়ু ও বয়স এর গড় হিসাবান্ত্মে দেখলাম তিনি প্রত্যেহ ১৬পৃষ্ঠা লিখতেন। ইমাম সাহেব প্রায় সকল বিষয়ে গ্রন্থ প্রনয়ন করে দেখেছেন। তিনি দর্শন, তর্ক, মনস্ত্ম ও স্বভাব বিজ্ঞান, নীতি বিজ্ঞান, ইলমে কালাম, ধর্মতত্ত্ব, আধ্যাতিক বিজ্ঞান, তাসাউফের উপর বেশি লেখেছেন। তার উল্লেখ যোগ্য রচনা হলো এহইয়ায়ে উলুমিদ্দিন, কিমিয়ায়ে সায়াদাত, মেনহাজুল আবেদীন, তাফসীর, ফেকাহ, সহ প্রায় চারশত কালজয়ী কিতাব। তিনি ৫৫ বছর জীবিত ছিলেন। ২০ বছর বয়স থেকে কিতাব রচনা শুরু করেন। তন্মোধ্যে ১০/১২ বছর কেটেছে সফরে।
দর্শন ও কালাম :-
তৎকালীন আলিম গন দর্শন ও কালাম এর গতি ইসলামের বিপরীত দিকে বলে আখ্যায়িত করেন। কিন্তু ইমাম সাহেব এসব কথার দাত ভাঙ্গা জবাব দিয়ে তিনি লিখেছেন মীছতাছফাতদর্শন শাস্ত্রে একটি আলাদা বিষয় হিসাবে ইমাম সাহেব দেখিয়ে ছিল। তিনি যুগশেষ দার্শনিক ছিলেন।
সন্ত্মানাদি :-
ইমাম সাহেবের কোন ছেলে সন্ত্মান ছিল না। মাত্র কয়েকজন মেয়ে ছিল। প্রায় সকলে শৈশবে ইন্ত্মেকাল করেন। শুধু শিওলমুনা ব্যতিত
ইন্ত্মেকাল :-
মানুষ মরনশীল। এ কথাটি আরো একবার স্বরণ করিয়ে দেন ৫০৫হিজরি জমাদিউস সানি মোতাবেক ১৯শে ডিসেম্বর ১১১১ খিৃঃ সোমবার খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে নামাজ আদায় করে পূর্বের প্রস্তুতকৃত কাপনের কাপড়টি নিলেন। কাপড়টি চোখের সামনে রেখে বললেন প্রভুর আদেশ শিরোধার্য এর মাধ্যমে।
শেষ কথা :-
ইমাম গায্‌যালী মুসলিম জাতিকে কতটুকু সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন তা অবর্নণীয়। তার দর্শন আজ বিজাতীরাও অনুসরন করছে। মহান ব্যক্তি সম্পর্কে বহুজন বহু মতামত ব্যক্ত করেছেন। কেউ কেউ তাকে মুজাদ্দেদও বলেছেন। আসুন ইসলামী দর্শন তথা ইমাম গায্‌যালীর দর্শনের বাস্ত্মবায়ক হিসাবে নিজেকে পরিচিত করি।