ভূমিকা :- ইমাম গায্যালী। এটি কোন অপরিচিত বা কোন নতুন নাম নয়।
মানুষের আত্নিক উন্নয়ন সাধনের জন্য তিনি রেখে গেছেন একসাগর অবদান। মানব জাতির
জ্ঞান ভান্ডারে ইমাম গায্যালীর গ্রন্থরাজি হীরক খন্ডের মতো বর্ণালি আলো ছড়িয়ে
চলছে নিত্য দিবস,
হউক সে, মুসলিম বা অন্য কিছু।
তিনি মূলত ৫ম শতাব্দীতে প্রকাশিত নূর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর
মোজেযা। যখন মুসলমান হিংসা,
বিদ্বেস,অহংকার,
গিবত, লোভ, হারাম, কীবর, কিজব, কিনা, ফাসাদ, বখিল রোগে আক্রান্ত্ম
হয়ে কিংকর্তব্যবিমূড় হয়ে স্ববিরোধী কার্যালাপে মন দিয়ে ঝুকে পরেছিল সেই সময়, নয় পূর্বে কিংবা পরে, এসব থেকে মানুষকে তার আসল স্বভাবকে ইয়াদ করিয়ে দিয়েছেন ইমাম গায্যালী।
তিনি মানুষকে তওবা,
এনাবত, যোহদ, শুকর, তায়াক্কুল, কানাত, তাসলিম, রেজা, সবুর নামে এসব গুনে
গুনান্বিত হওয়ার উদাত্ব আহ্ববায়ক। ইমাম গায্যালীকে তাসাউফের জীবন দাতা ও বলা
হয়। এ বিশাল মনীষীর বর্নাঢ্য জীবন থেকে, সামান্য থেকে সামান্য নিম্নে অংকন করলাম এজন্য যে, যাতে সেই ঐতিহ্য ও তাসাউফ আবার স্বরণ করি।
জন্ম :-
ইমাম গায্যালীর জন্ম স্থান নিয়ে ঐতিহাসিক গনের মধ্যেমত বিরোধ বিদ্যমান।
আল্লামা সামানী বলেন- ইরান এর খোরাসানের তুস প্রদেশের “গায্যালা” নামক গ্রামে ইমাম গায্যালী জন্ম গ্রহণ করেন। কিছু
সংখ্যক ঐতিহাসিকদের মতে তুস নগরের উপকন্ঠে “গায্যালা” নামে কোন গ্রাম ছিল না ; বরং তুরুস্ক প্রদেশের “তাহরান” নামক স্থানে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি হিজরী ৪৫০ সন মোতাবেক
১০৫৮ খিষ্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন।
নাম ও বংশ পরিচয় :-
ইমাম গায্যালীর নাম আবু হামেদ মুহাম্মদ। তার মূল নাম মুহাম্মদ। উপাধি
হুজ্জাতুল ইসলাম ও জয়নুল আবেদীন। পিতা মুহাম্মদ। দাদা আহমদ। ইমাম সাহেবের দাদা
ছিলেন একজন নেতৃস্থানীয় ও গণ্য মান্য ব্যক্তি। ইমাম সাহেবকে গায্যালী বলা হয়, যেহেতু গায্যালা
অর্থ সুতা ব্যবসা। ইমাম সাহেবের বংশ গত পেশা ছিল সুতা পাকিয়ে বিক্রয় করা।
বাল্যকাল ও শিক্ষাজীবন :-
তৎকালীন সময়ে জ্ঞান আহরনের সুবর্ন সুযোগ থাকা সর্ত্ত্বেও কোন এক অপরিচিত
কারনে ইমাম সাহেবের পিতা জ্ঞান অর্জনের সুযোগ লাভে বঞ্জিত হন। এ দুঃখ তাকে সর্বদা
তাড়াদিত। তিনি (পিতা) দুই ছেলে মুহাম্মদ ও আহমদকে বাল্য বয়সে রেখে ইন্ত্মেকাল
করেন। ইন্ত্মিকালের পূর্বে তার
ফাজিল বি.এ (অনার্স) ২য় বর্ষ (আল-কোরআন এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ)
জনৈক বিশ্বস্ত্ম ও অন্ত্মরঙ্গ বন্ধুকে জীবনের সমুদয় সম্পদের অনেকটা ভাগ
দিলেন এবং এ অর্থ দিয়ে তার বৎসদ্বয়কে শিক্ষার ব্যবস্থা করার অনুরোধ রাখলেন। সে
মুহুর্তে তিনি স্বীয় বন্ধুকে সম্বোধন করে অশ্রু গদগদ কন্ঠে বললেন “আমি জ্ঞানার্জনের
সুযোগ লাভের পরেও বঞ্জিত হয়ে আজীবন দারুণ অনুতাপে দগ্ধ হয়েছি। অন্ত্মরঙ্গ বন্ধু
আপনার নিকট আমার অনুরোধ অনুগ্রহ পূর্বক এ শিশুদ্বয়ের বিদ্যা শিক্ষার সুযোগ করবেন।
তারা জ্ঞান অর্জন করতে পারলে, আমি আশা করতে পারি তাদের জ্ঞান লাভের উছিলায় আমার এ
অনুতাপ অনেকটা কমে আসবে”।
তার ইন্ত্মিকালের পর দুই পুত্রই বিশাল জ্ঞানের অধিকারী হয়ে ছিলেন। ফলত:
জ্যৈষ্ঠ পুত্র মুহাম্মদ পরে ইমাম মুহাম্মদ গায্যালী এবং কনিষ্ঠ পুত্র আহমদ ইমাম
আহমদ গায্যালী নামে সুনাম কুড়ান। ইমাম সাহেবের পিতা ইন্ত্মেকালের পর তার বন্ধু
উভয়কে স্থায়ী মসজিদ সংলগ্ন মক্তবে ভর্তি করান। শিশুদ্বয় শৈশব থেকে অসাধারণ
মেধার অধিকারী ছিল বলে কম সময়ে তারা মহাগ্রন্থ আল কোরআন হিফয করেন। তারপর আরবি
ভাষায় মনোনিবেশ করেন।
ইমাম সাহেবের পিতা যে অর্থ তার বন্ধুকে দিয়েছিল তা ইতিমধ্যে সমাপ্তি
দেখাদিল। বাবার সেই জনৈক বন্ধু বললেন, তোমাদের যে অর্থ ছিল সবশেষ হয়ে গেছে। আমার অবস্থা
ক্রমশয় শোচনীয় হতে চলল, তিনি বললেন তোমরা দুই ভাই এখন এমন জায়গায় ভর্তি হও
যেখানে মাদরাসা কর্তৃপক্ষ গরীব শিক্ষার্থীদের সকল কিছুর ভার গ্রহন করে। বাবার
বন্ধুর পরামর্শ অনুযায়ী ইমাম সাহেব একটি অবৈতনিক মাদ্রাসা পেয়ে গেলেন। যা দিল
ইমাম সাহেবের পাশ্ববর্তী এলাকার। সেথায় তিনি ফিকহ্ এর প্রাথমিক কিতাবাদি হযরত
আহমদ ইবনে মুহাম্মদ রাজকানীর নিকট অধ্যয়ন করেন।
অতঃপর ইমাম সাহেব উচ্চ শিক্ষা অর্জন মানসে স্বীয় ভূমি ত্যাগ করে “জোরকান” শহরে গিয়ে
শাস্ত্রবিদ, যুগশ্রেষ্ঠআলেম ইমাম
আবু নছর ইসমাঈলের তত্ত্বাবধানে লেখা পড়া শুরু করলেন। তৎকালীন যুগে একটি প্রচলিত
রীতি ছিল যা ওস্ত্মাদ পড়াবেন তা লিখে রাখতে হবে। যা লিখে রাখা হয় তাকে “তা ‘লিকাত” বলা হয়। ইমাম সাহেব
যখন “জোরকান” শহরে পড়া শুনা শেষ
করে বাড়িতে রওনা দিলেন। পথিমধ্যে ডাকাত দল তার “তা ‘লিকাত” সহ সকল কিছু নিয়ে গেল। তিনি চিন্ত্মিত ও পেরেশান
অবস্থায় ডাকাত দলের সর্দারকে বললেন; আমাকে কিছু দিতে হবে না। শুধু মাত্র আমার জ্ঞানের
জুড়িটা “তা ‘লিকাত” গুলি দিয়ে দিন।
ডাকাত সর্দার বললেন; তুমি কেমন জ্ঞানী? তোমার জ্ঞান কাগজের পাতায়; তারপর তিনি দিয়ে দিলেন। ইমাম সাহেব সর্দারের কথা মনে
রেখে ক্ষোভের সাথে সকল “তা ‘লিকাত” কন্ঠস্থ করে ফেললেন।
তারপর ইমাম সাহেব জ্ঞান আহরনের তার মন আরো তীব্র থেকে তীব্র হতে লাগল।
তারপর তিনি তৎকালীন জ্ঞানের শহর খোরাসানের নিশাপুর নিজামিয়া মাদ্রাসায় অধ্যয়ন শুরু
করেন। যেখানে “ইমামুল হারামাইন” উপাধি প্রাপ্ত জনৈক
কাল জয়ী আলিম ছিলেন। ইমাম সাহেব তার শারগিত্ব লাভ করেন।
শিক্ষকতা :-
ইমাম সাহেবের পান্ডিত্ব ও সকল শাস্ত্রে দখলের খবর ছিল সর্বত্র আলোচিত। এ সব
খবর শুনার পর তৎকালীন প্রধান মন্ত্রী নিজামুল হক ইমাম সাহেবকে বাগদানের প্রধান
মাদ্রাসা, মাদ্রাসায়ে
নিজামিয়ার অধ্যক্ষ পদে আসিন করেন। তখন তার বয়স ছিল ৩৪ বছর। ইমাম সাহেব প্রসঙ্গত
কারণে দুইবার নিজামিয়া মাদ্রাসা থেকে পদত্যাগ করে। সর্বশেষ বার বাদ্শা তাকে
পুন:রায় যোগ দানের জন্য অনুরোধ করে। তিনি বলেন আমি হযরত ইবরাহিম আলাইহিস সালাম এর
মাজার জিয়ারত করে তিনটি শপথ করেছি (১) কদাচ কোন বাদ্শাহের দরবারে যাব না। (২)
কোন বাদ্শা থেকে হাদিয়া/বৃত্তি গ্রহণ করবো না। (৩) সবার সাথে বাহাছ/তর্ক করবো
না। ইনশাআল্লাহ মৃত্যু পর্যন্ত্ম তা রক্ষা করবো।
তাছাউফে অবদান :-
এ যাবত কাল পর্যন্ত্ম তাসাউফের উপর যত লিখনি প্রকাশ পেয়েছেন তার মধ্যে শতে
আশি হলো ইমাম সাহেবের। তিনি হযরত জুনাইদ বোগদানী, বাইজিদ বোস্ত্মামী, শিবলী সহ যুগশ্রেষ্ঠ সুফিয়ায়ে কেরামের বই পড়েছেন।
ইমাম সাহেব অধ্যাপনার থেকে ত্যাগ করে তিনি বাগদাদে অবস্থান করেন। তারপর অনেক দিন
একাকি বসবাস করেন। তিনি যখন বাগদাদ ত্যাগ করেন তখন উত্তম পোষাকের পরির্বতে একটি
মাত্র কম্বল নিয়ে বের হন। সুস্বাদু খাবারের পরিবর্তে শাক লতা পাতার প্রতিবেশি
মনোযোগী হন।
পীর গ্রহণ :-
ইমাম সাহেব খুব কম বয়সে ইলমে জাহেরের সাথে ইলমে বাতেনের শিক্ষা নেওয়ার
জন্য তৎকালীন সু বিখ্যাত বুজুর্গ, কামেল সূফী, শায়েখ আবু আলী ফারমাদী রহমতুল্লাহি আলাইহি হাতে বায়াত
গ্রহণ করেন। তখন তিনি ছাত্র ছিলেন।
লেখনি :-
ইমাম সাহেবের লেখনি ছিল খুরদার। ইমাম সাহেবের দ্রুত কলম চালনা সম্পর্কে
ঐতিহাসিক তীব্বী বলেন, “ইমাম সাহেবের আয়ু ও বয়স এর গড় হিসাবান্ত্মে দেখলাম তিনি প্রত্যেহ
১৬পৃষ্ঠা লিখতেন। ইমাম সাহেব প্রায় সকল বিষয়ে গ্রন্থ প্রনয়ন করে দেখেছেন। তিনি
দর্শন, তর্ক, মনস্ত্ম ও স্বভাব
বিজ্ঞান, নীতি বিজ্ঞান, ইলমে কালাম, ধর্মতত্ত্ব, আধ্যাতিক বিজ্ঞান, তাসাউফের উপর বেশি
লেখেছেন। তার উল্লেখ যোগ্য রচনা হলো এহইয়ায়ে উলুমিদ্দিন, কিমিয়ায়ে সায়াদাত, মেনহাজুল আবেদীন, তাফসীর, ফেকাহ, সহ প্রায় চারশত কালজয়ী কিতাব। তিনি ৫৫ বছর জীবিত
ছিলেন। ২০ বছর বয়স থেকে কিতাব রচনা শুরু করেন। তন্মোধ্যে ১০/১২ বছর কেটেছে সফরে।
দর্শন ও কালাম :-
তৎকালীন আলিম গন দর্শন ও কালাম এর গতি ইসলামের বিপরীত দিকে বলে আখ্যায়িত
করেন। কিন্তু ইমাম সাহেব এসব কথার দাত ভাঙ্গা জবাব দিয়ে তিনি লিখেছেন “মীছতাছফাত”। দর্শন শাস্ত্রে একটি আলাদা বিষয় হিসাবে ইমাম সাহেব দেখিয়ে ছিল। তিনি যুগশেষ
দার্শনিক ছিলেন।
সন্ত্মানাদি :-
ইমাম সাহেবের কোন ছেলে সন্ত্মান ছিল না। মাত্র কয়েকজন মেয়ে ছিল। প্রায়
সকলে শৈশবে ইন্ত্মেকাল করেন। শুধু শিওলমুনা ব্যতিত।
ইন্ত্মেকাল :-
মানুষ মরনশীল। এ কথাটি আরো একবার স্বরণ করিয়ে দেন ৫০৫হিজরি জমাদিউস সানি
মোতাবেক ১৯শে ডিসেম্বর ১১১১ খিৃঃ সোমবার খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে নামাজ আদায় করে
পূর্বের প্রস্তুতকৃত কাপনের কাপড়টি নিলেন। কাপড়টি চোখের সামনে রেখে বললেন “প্রভুর আদেশ
শিরোধার্য “এর মাধ্যমে।
শেষ কথা :-
ইমাম গায্যালী মুসলিম জাতিকে কতটুকু সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন তা
অবর্নণীয়। তার দর্শন আজ বিজাতীরাও অনুসরন করছে। মহান ব্যক্তি সম্পর্কে বহুজন বহু
মতামত ব্যক্ত করেছেন। কেউ কেউ তাকে মুজাদ্দেদও বলেছেন। আসুন ইসলামী দর্শন তথা ইমাম
গায্যালীর দর্শনের বাস্ত্মবায়ক হিসাবে নিজেকে পরিচিত করি।
YouTube Casino review - The videodl.cc
ReplyDeleteYouTube Casino review. The latest casino bonuses for mobile, desktop, youtube to mp4 and tablets. Play slots online like no other casino in the world. Rating: 4 · 1 vote