Sunday 16 February 2014

হযরত উসমান ইব্‌ন আফফান (রাঃ)


হযরত উমার (রাঃ) ইন্তিকালের পূর্বে খলীফা নির্বাচনের উদ্দেশ্যে বিশিষ্ট যে ছয়জন সাহাবীর সমন্বয়ে একটি মাজলিস গঠন করিয়াছিলেন হযরত উসমান (রাঃ) ছিলেন তাহাদের অন্যতম । তাহারা সর্বসম্মতিক্রমে উসমান (রাঃ) কে খলীফা পদে মনোনীত করেন । হযরত উসমান (রাঃ) তাঁহার খিলাফাতকালে কুরআন ও সুন্নাহ্‌র নীতি অনুসরণ করেন ।
হযরত উসমান (রাঃ) এর খিলাফাতের সপ্তম বৎসরে মুসলিমদের প্রথম অন্তবিরোধ আরম্ভ হয় । এবং স্বয়ং খলীফা এই বিরোধ বহ্নিতে শাহাদাত বরন করেন । আরব ঐতিহাসিকগণ এই ব্যাপারে খলীফার বিরুদ্ধবাদীগণের অভিযোগসমূহ লিপিবদ্ধ করিয়াছেন (আত-তাবারীকৃত আর রিয়াদুন নাদিরাঃ ফী মানাকিবিল আশারাঃ , কায়রো ১৩২৭ হিঃ, ২খ ১৩৭-১৫২ পুস্তকে ইহার বিস্তারিত আলোচনা আছে )। তাঁহার বিরুদ্ধে প্রথম এবং প্রধান অভিযোগ ছিল এই যে, তিনি তাঁহার আত্মীয় স্বজনগণকে প্রাদেশিক শাসঙ্কর্তার পদে নিযুখ করিয়াছিলেন । বাস্তবিকপক্ষে এই শাসনকর্তাদের অধিকাংশই উয্রত উমার (রা;) এর সময়েই নিযুক্ত হইয়াছিলেন । হযরত উমার (রাঃ) এর সময়েই প্রাদেশিক শাসনকর্তাগণের স্বাতন্ত্র্য-প্রিয়তার জন্য তাহাদিগকে খলীফার ক্ষমতাধীনে রাখা ক্রমশ দুরূহ হইয়া উঠিতেছিল । কিন্তু হযরত উমার (রাঃ) তাঁহার ব্যক্তিত্ব প্রভাবে প্রাদেশিক শাসনকর্তাগনকেও আয়ত্তে রাখিতে সক্ষম হইয়াছিলেন । হজরত উসমানের নমনীয়তার সুযোগ লইয়া তাঁহার গোত্রীয় আত্মীয়-স্বজনগণ তাঁহার উপর প্রাধান্য বিস্তার করে । তাঁহার বিরুদ্ধে আর একটি অভিযোগ এই ছিল যে, তিনি বিজয়লব্ধ ধন-সম্পত্তির একাংশ তাঁহার আত্মীয় স্বজনকে দান করিয়াছিলেন । উসমানী খিলাফাতের পূর্বে যে মধ্যপ্রাচ্যের অমুসলিম দেশগুলির বিরুদ্ধে যে জিহাদ চলিতেছিল, তাহাতে যে “মালু’ল গানীমা” পাওয়া যাইত তাহা সমস্ত সৈনিকের মধ্যে বণ্টন করিয়া দেওয়া হইত । ইহা হইতে কিছু কিছু অংশ বিশেষভাবে বিশিষ্ট ব্যক্তিগণকে দেওয়া হইত । হযরত উসমান (রাঃ) জনগনের সম্পদ হইতে অন্যায়ভাবে কাহাকেও কিছু দেন নাই । ব্যক্তিগত সম্পদ হইতে অনেক সময় আত্মীয় স্বজনকেও দান করিতেন । হযরত উসমান (রাঃ) হযরত আবু বকর (রাঃ) সংগৃহীত কুরআন মজিদের প্রামাণ্য অনুলিপি প্রস্তুত করাইয়া প্রাদেশিক শাসনকর্তাগণের নিকট পাঠাইয়া দেন এবং আঞ্চলিক পাঠ বৈষম্যযুক্ত অনুলিপিগুলি জ্বালাইয়া ফেলিতে আদেশ দেন । হযরত উসমান (রাঃ) এর এই কার্যের উদ্দেশ্য ছিল যে, বিস্তীর্ন মুসলিম খিলাফাতে প্রচলিত আরবী বাক-রীতির অনুপ্রবেশে যেন কুরআনে পাঠ-বৈষম্যের সৃষ্টি না হয় । অথচ ইহাকেও তাঁহার বিরুদ্ধবাদীরা আন্দোলনের হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করে ।

No comments:

Post a Comment