Saturday 15 February 2014

মাযারে গমন ও নবী - ওলীদের কাছে দোয়া চাওয়া বৈধ

বিসমিলাল্লাহির রাহ মানির রাহিম।
নবী (আঃ) ও আউলিয়ায়ে কেরাম (রা:) দের যিয়ারতের জন্য তাঁদের মাযার শরীফে গমন করা এবং তাঁদের নিকট দোয়া চাওয়া বৈধ, এবং ইহা দোয়া কবুল হওয়ার জন্য একটি উত্তম পন্থা।

নবী (আঃ) ও আউলিয়ায়ে কেরামগণও আল্লাহর প্রদত্ত ক্ষমতা বলে কারো জন্য দোয়া এবং সাহায্য করার ক্ষমতা রাখেন।

'''''''''''''''''''''' '''''''''''''''''''''' ''''''''''''''
নিম্নে বর্ণিত দলীল সমূহের মাধ্যমে প্রমান দেওয়া হলো।
''''''''''''''''' '''''''''''''''' ''''''''''''''''''''''''''
(০১) মেশকাত শরীফের ১৫৪নং পৃষ্ঠায় "যিয়ারাতুল কুবরা" অধ্যায়ে রাসূলে পাক (দঃ) এ্ররশাদ করেন-

অর্থাৎ হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসুউদ (রাঃ) হতে বর্ণিত।তিনি বর্ণনা করেন রাসূলে পাক (দঃ) ইরশাদ করেছেন "আমি তোমাদেরকে প্রাথমিক যুগে কবর যিয়ারত করতে নিষেধ করতাম।এখন তোমরা কবর যিয়ারত করো কেননা যিয়ারতের দ্বারা দুনিয়ার প্রতি মোহ কাটবে এবং পরকালের কথা স্মরণ আসবে।

--------------++++-------------+++++
(০২) অন্য একটি হাদীসের মাধ্যমে জানা যায় হযরত ওমর ফারুক (রাঃ) খেলাফতের জামানায় দুর্ভিক্ষ দেখা দিলে হযরত বেলাল ইবনে হারেস (রাঃ) রাসূলে করিম (দঃ) এর রওজা মোবারকে উপস্থিত হয়ে তাঁর নিকট এভাবে দোয়া করছিলেন ইয়া রাসূলাল্লাহ (দঃ) আপনি নিজ উম্মতের জন্য বৃষ্টি প্রার্থনা করুন।

ইমাম বায়হাকী (রাঃ) তাঁর কিতাবে বর্ণনা করেন-
অর্থাৎঃ হযরত ওমর ফারুক (রাঃ) এর খেলাফত কালে যখন জনগন দুর্ভিক্ষে পতিত হলো তখন হযরত বেলাল বিন হারেছ (রাঃ) (তিনি রাসূলা পাক (দ:) এর একজন অন্যতম সাহাবী ছিলেন) রাসূল পাক (দঃ) এর রওযা মোবারকের নিকট গেলেন

এবং রাসূলে পাক (দঃ) কে সম্বোধন করে বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ (দঃ) আপনি আপনার উম্মতের জন্য বৃষ্টির প্রার্থনা করুন, কেননা তারা (অনাবৃষ্টির কারনে) ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে।

অতঃপর রাসূেল করীম (দঃ) স্বপ্নের মাধ্যমে তাঁর নিকট আগমন করলেন এবং এ বলে সংবাদ দিলেন "নিশ্চয়ই তাদের উপর বৃষ্টি বর্ষিত হবে।" এবং তাই হয়েছিল।
(আলহাকায়েকুল ইসলামিয়্যাহ, পৃঃ নং- ২৪)
---------------+++++----------------

(০৩) ইমাম শাফেয়ী (রাঃ) সুদূর ফিলিস্তিন থেকে সফর করে বাগদাদ শরীফে এসে ইমাম আবু হানীফা (রাঃ) এর মাজার শরীফে জিয়ারত করতেন এবং বরকত লাভ করতেন।

অর্থাৎ আমি (আমি শাফেয়ী) বরকত লাভের উদ্দেশ্যে ইমাম আবু হানিফা (রাঃ) এর মাযারে আগমন করে থাকি। যদি কোন বিষয়ের সমাধান প্রয়োজন হতো, তখন আমি দুরাকাত নফল নামায পড়ে, তাঁর মাযারে গিয়ে খোদার কাছে (তাঁর উসিলা ধরে) প্রার্থনা তরতাম। সাথে সাথে আমার সে মকসুদ পূর্ণ হয়ে যেতো।
(ফতোয়ায়ে শামীর মোকাদ্দামা, পৃষ্টা নং- ১৪৯)

(০৪) ইমাম শাফেয়ী (রাঃ) আওলাদে রাসূল (দঃ) ইমাম মুসা কাজেম (রাঃ) এর মাযার সম্পর্কে বলেন-
অর্থাৎ- হযরত মুসা কাজেম (রাঃ) এর মাযার দোয়া কবুল হওয়ার জন্য পরীক্ষিত অব্যর্থ ঔষধ। অর্থাৎ হযরত মুসা কাজেম (রাঃ) এর মাযারে গিয়ে কোন দোয়া করা হলে ঐ দোয়া বিফলে যায় না।বরং আল্লাহর দরবারে গৃহীত হয়।
(মেশকাত শরীফের ১৫৪নং পৃষ্ঠার ২নং টিকা)

(০৫) আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী (রাঃ) রচিত "নুজহাতুল খাতিরিল ফাতির ফি তরজুমাতে সাইয়্যিদী আশ শরীফ আব্দুল কাদির" নামক গ্রন্থে হযরত গাউছে পাক (রাঃ) এর মশহুর উক্তি বর্ণনা করেন।
উক্তিটি নিম্নরুপ।

অর্থাঃ বড়পীড় আব্দুল কাদের জিলালী (রাঃ) বলেন- " যে ব্যক্তি চিন্তা ভাবনায় পড়ে আমার নিকট (রুহানী) সাহায্য প্রার্থনা করে তার চিন্তা ও পেরেশানী দুর হবে।

যে ব্যক্তি মুসিবতের সময় আমার নাম ধরে সাহায্য প্রাপ্তির উদ্দেশ্যে আমাকে ডাকে, তার উক্ত মুসিবত দুরিভূত হবে এবং যে ব্যক্তি আমার উসিলা করে আল্লাহর নিকট কোন মনোবাসনা পূর্ণ হওয়ার জন্য দোয়া করে, তার উক্ত মনোবাসনা পূর্ণ হবে।
(বাহজাতুল আসরার)

(০৬) প্রখ্যাত ইসলামী দার্শনিক ইমাম গাজ্জালী (রাঃ) বলেন-যাদের নিকট (নবী,ওলী, গাউস-কুতুব, আলেম ওলামা) তাদের জীবিত থাকাবস্থায় দোয়া চাওয়া বৈধ আছে, তাঁদের ওফাতের পরও তাদের নিকট দোয়া চাওয়া বৈধ।
(মেশকাত শরীফের পৃষ্ঠা নং ১৫৪এর টীকা)
(অাশিয়াতুল লুমআত (উর্দু) ২য় খন্ড, পৃষ্ঠা ৯২৩)

(০৭) শায়খ আব্দুল হক মোহাদ্দেসে দেহলভী (রাঃ) তদ্বীয় " আশিয়াতুল লুমআত শরহে মেরকাত " গ্রন্থের "যিয়ারাতুল কুবুর" অধ্যায় বলেন-
অর্থাৎ মাযার যিয়ারত করা সর্বসম্মতি ক্রমে মোস্তাহাব।
" অাশিয়াতুল লুমআত, ২য় খন্ড, পৃষ্ঠা- ৯২৩)

(০৮) আল্লামা নাবলুসী (রহঃ) তদীয় "হাদিকাতু নদীয়া" গ্রন্থের মধ্যে বর্ণনা করেন-
অর্থাৎ- আউলিয়ায়ে কেরাম (রাঃ) দের কারামত তাদের ইন্তেকালের পরও জারি বা অবশিষ্ট থাকে। যে ব্যক্তি এ আক্বীদার বিপরীত মত পোষন করে সে হঠকারী জাহেল বা মূর্খ।
(কৃত-রুহ কি দুনিয়া পৃষ্ঠা- ১০৯)
--------------++++-------------------
--------+++-----------++++----------

ওহাবীদের অন্যতম ধর্মীয় গুরু মৌঃ আশ্রাফ আলী থানবী লিখিত ইমদাদুল ফতোয়া ৩য় খন্ড অধ্যায়ে উল্লেখ আছে-
অর্থাৎ- অলীগণের জ্ঞান ও ক্ষমতাকে স্বয়ং সম্পূর্ণ মনে করে তাদের নিকট যে সাহায্য প্রার্থনা করা হয়, তা শিরক। কিন্তু অলীগণের জ্ঞান ও ক্ষমতাকে স্বয়ংসম্পূর্ণ মনে না করে বরং আল্লাহ প্রদত্ত মনে করে যদি তাদের নিকট সাহায্য প্রার্থনা করা হয় এবং যে কোন প্রমান ও উদাহারন দ্বারা তাঁদের উক্ত সীমিত জ্ঞান ও ক্ষমতা প্রমানিত হয়, তাহলে তাদের নিকট সাহায্য প্রার্থনা করা জায়েয।চাই তিনি জীবিত হোক বা মৃত।
(কৃত- আহকামুল মাযার)

No comments:

Post a Comment